বৃহস্পতিবার রাতে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই নাশকতার পিছনে রয়েছে মাওবাদীরাই। পুলিশ কী ভাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে শনিবার তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ভূপিন্দর সিংহ। কিন্তু শুক্রবার রেলের তরফে ঝাড়গ্রাম জিআরপি থানায় যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। অভিযোগ করা হয়নি পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির বিরুদ্ধেও। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের চালক বিভয়কুমার দাস শুক্রবার সন্ধ্যায় এফআইআর দায়ের করেছেন জানিয়ে এডিজি (রেল) দিলীপ মিত্র শনিবার বলেন, ওই এফআইআরে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ কর সে ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে মাওবাদীদের দায়ী করছে পুলিশ? রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে লোক জড়ো করা, লাইনের ক্লিপ খোলার জন্য রেলের ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া এবং নাশকতার পরে তাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের যে তথ্য মিলেছে, তার ভিত্তিতেই পুলিশ মাওবাদীদের ভূমিকা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌছেঁছে। স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষ এ দিন স্পষ্ট করেই বলেন, “রাজ্য মনে করছে, নাশকতার পিছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে।” ভূপিন্দর সিংহ শনিবার বলেন, “দুর্ঘটনার আগে একটি ভাড়া করা পিক-আপ ভ্যানে চেপে ১০-১২ জন রেললাইনের কাছে পৌঁছয়। আশপাশের গ্রাম থেকে কিছু জোয়ান ছেলেকে জোর করে তুলে নিয়ে আসে তারা। ওই ছেলেরাই লাইনের প্যাোল ক্লিপ খুলে নেয়।” পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, শুক্রবার রাতে জনগণের কমিটির কিছু কর্মী-সমর্থক সরডিহা স্টেশন লাগোয়া মানিকপাড়ার আখড়াশোলে জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে ছিল মাওবাদীরাও। তারাই ওই এলাকার বাসিন্দা রেলের কয়েক জন ঠিকা-কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে বাধ্য করে। ডিজি জানান, প্যাোল ক্লিপকে স্থানীয় ভাষায় বল দুর্ঘটনার আগের দিন মানিকপাড়াতেই মাওবাদী সন্দেহে সাত জনকে আটক করেছিল যৌথ বাহিনী। তার ‘বদলা’ নিতেই রাতারাতি রেললাইনে নাশকতার ছক কষা হয় বলে পুলিশের অনুমান। এক পুলিশকর্তা বলেন, “মানিকপাড়া মাওবাদীদের শক্ত ঘাটিঁ। সেখানে বিট হাউসে পুলিশের একটি শিবির আছে। আগেও বেশ কয়েক বার ওই শিবিরে জনগণের কমিটি হামলা চালায়। ওই এলাকায় কারা রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন, সেই খবর মাওবাদীদের কাছে ছিল। তাদেঁরই বেছে বেছে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী, যে খং (বড় হাতুড়ি) নিয়ে তাঁরা লাইনের কাজ করেন সেগুলিও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।” বন্দুকের মুখে ঠিকা-কর্মীরাই রেললাইনে নাশকতার ফাঁদ তৈরি করেন। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, রেলের ঠিকা কর্মীদরে নিয়ে মাওবাদীরা আখড়াশোল থেকে একটি পিক-আপ ভ্যানে চেপে পাকা রাস্তা দিয়ে সরডিহা পৌঁছয়। সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার মোরাম রাস্তা ধরে রাত ১২টা নাগাদ রাজাবাধেঁ আসে। রাজাবাধেঁ পৌছেঁ পিক-আপ ভ্যানটিকে ছেড়ে দেয় মাওবাদীরা। সেটি গুপ্তমণি হয়ে সাঁকরাইল যায়। সেখান থেকে বালিভাসা হয়ে মানিকপাড়া ফিরে আসে। ওই পিক-আপ ভ্যানটির নম্বর পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাওবাদীরা রাজাবাধেঁ আসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখান দিয়ে হাওড়া-পোরবন্দর এক্সপ্রেস পেরোয়। আরও ১৫ মিনিট পরে যায় হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেস। তারও পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। পুলিশের অনুমান, রাত ১২টায় রাজাবাধেঁ পৌঁছলেও মাওবাদীরা রেললাইনের নাশকতার কাজ শুরু করে হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেস যাওয়ার পরেই। তার কারণ ওই ট্রেনের সঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী আসার ফাঁক ছিল অনেকটা। সেই সুযোগই নেয় মাওবাদীরা। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই লাইন দিয়ে যাতায়াতকারী ট্রেনের সময়সূচি মাওবাদীদের মুখস্থ।” প্রাথমিক তদন্তের পরে সিআইডি নিশ্চিত, রেললাইনে ৫০ মিটার জুড়ে প্যাোল ক্লিপ খোলার ফলেই বেলাইন হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। এবং ওই কাজ এখন মাওবাদীদের কাছে ‘জলভাত’ বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। পুলিশি রিপোর্ট বলছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম স্টেশনের অদূরে ঝাড়াগেড়িয়ায় প্যাোল ক্লিপ খুলে ৪০০ মিটার রেললাইন স্লিপার থেকে আলাদা করে দেয় মাওবাদীরা। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে রেল লাইনে কোনও বিস্ফোরণ মাওবাদীরা ঘটায়নি। কিন্তু ট্রেনচালক তাঁর এইআইআরে চাকার নীচে বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ডিজি-র বক্তব্য, “ছোটখাটো বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে সেটা নানা কারণে হতে পারে। কিন্তু বড় মাপের বিস্ফোরণ হলে তার যে পরিমাণ দৃশ্যমানতা থাকে, সরডিহায় তা দেখা যায়নি। এ কথা তো ঠিক, ছোট মাপের বিস্ফোরণে ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে না।” | ||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||
লাইনচ্যুত হয়ে ডাউন লাইনে এসে পড়া আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মেরেছিল যে মালগাড়িটি, তার চালক নির্ভয় কুমার শুক্রবার জানিয়েছিলেন, প্যান্ট-শার্ট পরা জনা সাতেক লোক দুর্ঘটনার পরে রেললাইনের পাশে দাড়িঁয়েছিল। তাদের হাতে বড় টর্চ ছিল। বাংলায় কথা বলছিল। নিজেদের মধ্যে কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল তারা। পুলিশের মতে, ওই জনা সাতেক লোকই নাশকতার ছক কষা মাওবাদী। এদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে খুব শীঘ্রই তদন্তকারী অফিসারেরা নির্ভয় কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, ওই রেললাইনের দেখভালকারী ১২ জন লাইনম্যানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোরেই রাজবাধেঁর ঘটনাস্থল থেকে জনগণের কমিটির নামাঙ্কিত একটি হাতে লেখা পোস্টার পেয়েছিল পুলিশ। কমিটির নেতাদের মধ্যে মোবাইলে কথোপকথনে আড়ি পেতেও যে তথ্য মিলেছে, তাতে দুর্ঘটনার পিছনে তাদের হাত থাকা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বলে দাবি রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, পুলিশ জেনেছে, বাপি মাহাতো নামে রাজাবাধেঁর এক কমিটি নেতা বৃহস্পতিবার রাতেই জনগণের কমিটির নেতা অসিত মাহাতোকে ফোন করে রেললাইনে ‘সর্বনাশ’-এর খবর দিয়েছিলেন। সেই তথ্য ধরেই নাশকতায় জড়িত কমিটির নেতা-কর্মীদরে খোজেঁ জোরদার তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকেদের তেমন ভাবে না আসাকেও মাওবাদীদের জড়িত থাকার বড় প্রমাণ হিসেবে দেখছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে কোনও দুর্ঘটনা হলে সবার আগে উদ্ধারকাজে হাত লাগান এলাকার মানুষই। কিন্তু সরডিহাতে তাদেঁর অনেকেই মাওবাদীদের প্রতি ভয়ে বা ভক্তিতে দুর্ঘটনাস্থলের ধারে কাছে যাননি। কিন্তু মাওবাদীরা নিজের তবে সরডিহার ঘটনার পিছনে তাদেঁর কোনও হাত নেই বলে এ দিন ফের দাবি করেছেন অসিত মাহাতো। কমিটির পোস্টার উদ্ধার হওয়ার পর শুক্রবার সকালেই সংগঠনের এই প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সমস্ত ঘটনা শোনার পরে তাঁর মন্তব্য ছিল, “খোঁজ নিয়ে জানাব।” এর পরে অসিতবাবুর ফোন সারা দিন বন্ধই ছিল। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “কমিটি নেতার এমন মন্তব্য খুবই অস্বাভাবিক। জঙ্গলমহলের কোথায় কী হচ্ছে, কমিটির নেতারা তার খুটিঁনাটি জানেন।” শুক্রবার সন্ধ্যার মুখে ফের ফোনে যোগাযাগ করা যায় অসিতবাবুর সঙ্গে। প্রথমটায় অস্বস্তি জড়ানো গলায় ‘আন্তরিক ভাবে দুঃখিত’ বলে মন্তব্য করলেও পর মুহূর্তে দুর্ঘটনার সমস্ত দায় সিপিএমের উপরে চাপিয়ে দেন তিনি। রেল নাশকতায় সি পি এমেরই হাত, ইঙ্গিত মমতার নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পিছনে সি পি এমের হাত আছে বলে অভিযোগ করলেন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সি পি এমের নাম না করলেও তিনি প্রশ্ন তোলেন, একটি রাজনৈতিক দল ঘটনার পর এত তাড়াতাড়ি মাঠে নেমে পড়ল কী করে? তাদের পোস্টার, ব্যানার রাতারাতি এল কোথা থেকে? যখন স্টিফেন কোর্টে আগুন জ্বলেছে কিংবা উলুবেড়িয়ায় বাস দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন তো এদের দেখা যায়নি। মমতার অভিযোগ, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের এতজন নিরীহ যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। পুরভোটের মুখে আমাকে জনসমক্ষে হেয় করতে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নেওয়া হল। আমি চাই, এই নাশকতার পূর্ণ তদন্ত করুক সি বি আই। সেই তদন্তে দোষীদের খুজেঁ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। রেলমন্ত্রীর দাবি, সি বি আই তদন্তের ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক করতে চলেছে। মমতার বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রেললাইনে কোনও ফিশপ্লেট খোলা হয়নি। আসলে ওখানে লাইনে ফিশপ্লেটই নেই। এটা লং ওয়েল্ডেড রেল ট্র্যাক। আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস যাওয়ার আগে পাইলট ইঞ্জিন চালানো হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাও উড়িয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পাইলট ইঞ্জিন ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার পর একটি মালগাড়ি সহ তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেন গিয়েছিল। জ্ঞানেশ্বরী যাওয়ার কয়েক মিনিট আগেই মালগাড়িটি পাস করে। বোমা বিস্ফোরণ যে হয়েছিল, সেটা জ্ঞানেশ্বরীর চালক বি কে দাস ঝাড়গ্রাম জি আর পি থানায় দায়ের করা এফ আই আরে উল্লেখ করেছেন। যাত্রীরাও আমাকে সেই কথা জানিয়েছেন। মমতার অভিযোগ, একেবারে ছক সাজিয়ে এই নাশকতা ঘটানো হয়েছে। এটা একটা জঘন্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। তবে তদন্তে সব ধরা পড়ে যাবে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের দু’জন মন্ত্রী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বাদাম খেতে বসে গেলেন। তাঁদের লোকজনের খাবার এবং জল চলে এল। অথচ, ওখানে আমরা পানীয় জল পাইনি। সি পি এমের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর আরও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ অন্য মন্ত্রীরা শোকের নাটক করছেন। কিন্তু স্টিফেন কোর্টে কিংবা উলুবেড়িয়ায় ঘটনার সময় তাঁদের দেখা যায়নি। তাছাড়া পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে রাতারাতি প্রচারের আয়োজন কী করে সি পি এম করল? আমি এলাকা থেকে অনেক তথ্য নিয়ে এসেছি। সি বি আই তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। এলাকাটা তো সি পি এমের হার্মদাদের দখলে। পুরভোটে এই নাশকতার জবাব দিতে তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে রায় দেওয়ার আবেদন জানান। মমতা বলেন, শুধু এই ঘটনাই নয়, আমি রেলমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এরকম চক্রান্ত চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের কাছেও এভাবে লাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। অথচ, ওখানে তো আর মাওবাদী নেই।মাওবাদীদের হটিয়ে আশপাশের কয়েকটি সরডিহা ও খেমাশুলি েস্টশনের মাঝে গ্যাসকাটার দিয়েই লাইনের দু’জায়গায় বেশ কিছুটা অংশ কেটে নেওয়া হয়েছিল বলে তদেন্ত নেমে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। আপ লাইনের দুটি অংশ কাটতে এবং েপেণ্ড্রাল ক্লিপ খুলতে দুষ্কৃতীরা প্রায় ৪০ মিনিট সময় নিয়েছিল। নাশকতার কাজে যুক্ত ওই দলটিতে ২৫ থেকে ৩০ জন ছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। নানা বিষয়ের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখে নাশকতার এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীরাই যুক্ত, এখনই এমন কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধোন্ত আসতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। তেমনই, অন্য কেউ এই নাশকতার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের হটিয়ে বুধবারই সরডিহার ওই অংশের দখল নিয়েছিল সি পি এম। লালগড় থেকে বিতাড়িত এক সি পি এম নেতার নেৃতেত্ব বুরজুটি, পাথরি, কোল্লা, কাঁকরাশোল এবং গাইমারার মতো গ্রামগুলিতে বিরোধী দলের সমর্থক বলে পরিচিত বেশ কয়েকজনের বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। মাওবাদীদের ঠেকাতে বুরজুটি গ্রামে সশস্ত্র হার্মদাদের ক্যাম্প করে রাখা হয়েছে বলে খবর এসেছে গোয়েন্দাদের কাছেও। তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন, ওই এলাকায় ২৬ মে রাতে লালপার্টির বাছাই কর্মীদরে বৈঠকের এজেন্ডা নিয়েও। সি পি এমের এই পাহারাদারদের উপিস্থতির মাঝে মাওবাদীরা কী ভাবে এতবড় ঘটনা ঘটাতে পারল, তাও খুজেঁ দেখা হচ্ছে। তাছাড়াও, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরিডহা থেকে সামান্য দূরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ের পর পালিয়ে যায় একদল মাওবাদী। যৌথ বাহিনী সেখানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সংঘর্ষের পর সি আর পি থাকা সেত্ত্বও সংিশ্লষ্ট এলাকায় মাওবাদীরা ফের বীরত্ব ফলাতে এসেছে, এমন দৃষ্টান্ত জঙ্গলমহলে নেই। তদেন্ত এই ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে পুলিশকে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার তদেন্ত নেমে গোয়েন্দারা হদিশ পেয়েছেন কয়েকজন গ্যাংম্যানের। এঁরাই বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মতো সরডিহাখেমাশুলির মাঝের অংশের লাইন পরীক্ষা করেছিলেন। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, গ্যাংম্যানদের এই দলটিকে ভয় দেখিয়েই আপ ও ডাউন লাইনে প্রায় ২০০ মিটার অংশের েপেণ্ড্রাল ক্লিপ খোলানো হয়েছিল। এই গ্যাংম্যানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নাশকতার সঙ্গে যুক্তদের ব্যাপারে বাড়তি খবরাখবর মিলবে বলেও আশা করছে পুলিশ। গোয়েন্দারা বলছেন, সরডিহা ও খেমাশুলির মাঝের ওই আপ লাইন দিয়ে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের আগে রাত পৌনে একটা নাগাদ গিয়েছিল রাঁচিহাতিয়া এক্সপ্রেস। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১টা ২৫ মিনিট নাগাদ। অর্থৎা দুটি েট্রনের মাঝের প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে নাশকতার ব্লু প্রিণ্ট তৈরি করা হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩৪/১১ ও ১৩৪/১২ রেল পেোস্টর মাঝে আপ লাইনের যে দুটি অংশে লাইন কাটা হয়েছিল, তা গ্যাস কাটার ছাড়া কোনওভাবেই ওই সময়ের মধ্যে কাটা সম্ভব নয়। পূর্ব প্রস্তুতি এবং আশপাশের গ্রামের লোকজনের সাহায্য ছাড়া এ কাজ অসম্ভব। আরও একটি বিষয়ও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। তা হল, এর আগে যতবারই মাওবাদী এবং সিুধুকানহু গণমিলিশিয়া কোনও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা দায় স্বীকার করে ঘটনাস্থলে পোস্টারও সেটেঁ দিয়েছে। সেই পোস্টারে লাল কালিতে নিতান্তই কাঁচা হাতে ভুল বানানে বয়ানগুলি লেখা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম নীল কালিতে বেশ পাকা হাতের লেখায় জনসাধারণের কমিটির নামে নাশকতার দায় স্বীকার করা পোক্রার মিলেছে সরডিহার দুর্ঘটনাক্ললে। গোয়েন্দারা বলছেন, তড়িঘড়ি নয়, ধীরেসুক্লে চিন্দাভাবনা করে লেখা হয়েছে দায় িীকারের ওই পোক্রার। এই বিষয়টিও তদন্দের কাজে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তাঁরা। Hানেশ্বরীতে নাশকতায় নিজি প্রতিনিধি, কলকাতা: শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনা মাওবাদীদের কাজ। ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই রাজ্য পুলিশের ডি জি ভূপিন্দর সিং শনিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা নিশ্চিত, এই কাজ অবশ্যই মাওবাদীরা করেছে। সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষও বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে, মাওবাদীরাই যুক্ত। ৗধু তাই নয়, মাওবাদীরা এই কাজের জন্য রেলের লোকজনকে কাজে লাগিয়েছে ধরে নিয়ে সি আই ডি তদন্দ চালাচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ডি জি। তিনি বলেন, রেলের গ্যাংম্যানরা সাধারণত এলাকার লোক হন। অনেক জায়গাতেই ঠিকাদাররা তাদের নিয়োগ করে। তাদের উপর মাওবাদীদের প্রভাব থাকা অসম্ভব নয়। ডি জি জানিয়েছেন, রেলের ওই সব লোকদের সি আই ডি জেরা করছে। এদিকে, নাশকতার কারণ স৩র্কে ৗক্রবার বিেত্মারণের সসাবনা একপ্রকার উড়িয়ে দিয়েছিলেন ডি জি। কিচ্চ এদিন তিনি বলেন, বিেত্মারণ হয়ে থাকলেও তা বড়মাপের ছিল না এবঁি তা ৌঁন বেলাইন হওয়ার কারণ নয়। তাঁর বক্তব্য, জ্ঞানেশ্বরীর চালক যে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তা বাজির আওয়াজও হতে পারে। কোনও বিশেষ বার্তা হিসাবে মাওবাদীরা বাজি ফাটিয়ে থাকতে পারে বলে ডি জি দাবি করেন। ৌঁন বেলাইন হওয়ার কারণ কি? ডি জি বলেন, কঁিক্রিটের িন্মপারের উপর রেললাইন আটকে রাখার জন্য যে েপেঙাল ব্যবহার করা হয় ঘটনাক্ললে আপ এবঁি ডাউন দুই লাইনেই তার বেশ কিছু খোলা ছিল। ফলে যে কোনও লাইনেই ওই ঘটনা ঘটতে পারত। ঘটনাচক্রে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস আগে আসায় সেটি বেলাইন হয়। ইঞ্জিনটি মোটামুটি লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশ কয়েকটি বগি পাশের লাইনে উঠে যায়। সেগুলিতেই ধাক্কা মারে উলটো দিক থেকে আসা মালগাড়ি। ৗক্রবার নিজে ঘটনাক্ললে গিয়েছিলেন ডি জি। সেখানেই তিনি বিেত্মারণের সসাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ছিল বিেত্মারণ হলে মাটিতে অনেকটা গর্ত হওয়ার কথা। কিচ্চ ঘটনাক্ললে তা দেখা যায়নি। এদিন মহাকরণে তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই দাবি করেন, মাওবাদীরা ছাড়া আর কেউ এই কাজ করেনি। তদন্দ শেষ হওয়ার আগেই তিনি এতটা জোর দিয়ে কী করে এ কথা বলছেন? ডি জি’র বক্তব্য, প্রাথমিক তদেন্দই কয়েকজনকে চিিূত করা গিয়েছে যারা এই কাজ করেছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে মাওবাদীরা স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম থেকে যুবকদের তুলে নিয়ে যায়। ওই যুবকদেরই রেলের পেণ্ড্রোল ক্লিপ খোলার কাজে লাগানো হয়েছিল বলে ডি জি’র দাবি। তিনি বলেন, ওই এলাকায় মাওবাদীরা ধারাবাহিকভাবে নাশকতামূলক কাজ করে চলেছে।নাম না করে কার্যত সি পি এমকেই দায়ী করলেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পিছনে নাম না করে কার্যত সি পি এমকেই দায়ী করলেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সেখানে শুভাপ্রসন্ন, সুনন্দ সান্যাল, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, শাঁওলি মিত্র, প্রসূন ভৌমিক, যোগেন চৌধুরি, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মূল বক্তব্য, পুরভোটের মাত্র দু’দিন আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। মাওবাদীরা এবং পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি দাবি করেছে, এই কাজ তাদের নয়। তাহলে নিশ্চয়ই এই ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভবান হবে, তারাই উেদ্দশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সেটা যে কার্যত সি পি এম, তাও আকারইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন বুদ্ধিজীবীরা। তবে এরপরই সাংবাদিকরা এনিয়ে পালটা প্রশ্ন করতে চাইলে বুদ্ধিজীবীরা উত্তর দিতে চাননি। এরপরই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ময়দান থানার পুলিশও প্রেস ক্লাবে যায়। পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের অন্য একটি ফোরাম শিল্পীসাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চও এই ঘটনার নিন্দা করে এর পিছনে অন্য কোনও ‘শক্তি’র হাত থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। এদিকে বুদ্ধিজীবীরা কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সাংবাদিক বৈঠক না করলেও রাজ্য নির্বচান কমিশনের কাছে এনিয়ে অভিযোগ যায়। কমিনের সচিব এস এন রায়চৌধুরি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২৮ মে বিকাল ৩টের পর প্রকাশ্যে কেউ নির্বচানী প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু এই সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন সি পি এমের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসে যে ওখানে নির্বচানী বিধি ভঙ্গ হচ্ছে। এরপর আমরা প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলি। পুলিশকে বলা হয়েছে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমকে এনিয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ময়দান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বচান কমিশন কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন যেভাবে পুলিশ প্রেস ক্লাবে ঢুকে পড়ে এবং নির্বচান কমিশন যেভাবে এনিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, তার তীব্র নিন্দা করেছে প্রেস ক্লাব।
|
Sunday, May 30, 2010
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা
রেল ঠিকা-কর্মী দিয়েই নাশকতা মাওবাদীদের
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment