Sunday, May 30, 2010

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা

রেল ঠিকা-কর্মী দিয়েই নাশকতা মাওবাদীদের

বৃহস্পতিবার রাতে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই নাশকতার পিছনে রয়েছে মাওবাদীরাই। পুলিশ কী ভাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে শনিবার তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ভূপিন্দর সিংহ। কিন্তু শুক্রবার রেলের তরফে ঝাড়গ্রাম জিআরপি থানায় যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। অভিযোগ করা হয়নি পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির বিরুদ্ধেও।

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের চালক বিভয়কুমার দাস শুক্রবার সন্ধ্যায় এফআইআর দায়ের করেছেন জানিয়ে এডিজি (রেল) দিলীপ মিত্র শনিবার বলেন, ওই এফআইআরে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ কর া হনি

সে ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে মাওবাদীদের দায়ী করছে পুলিশ?

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে লোক জড়ো করা, লাইনের ক্লিপ খোলার জন্য রেলের ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া এবং নাশকতার পরে তাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের যে তথ্য মিলেছে, তার ভিত্তিতেই পুলিশ মাওবাদীদের ভূমিকা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌছেঁছে। স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষ এ দিন স্পষ্ট করেই বলেন, “রাজ্য মনে করছে, নাশকতার পিছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে।”

ভূপিন্দর সিংহ শনিবার বলেন, “দুর্ঘটনার আগে একটি ভাড়া করা পিক-আপ ভ্যানে চেপে ১০-১২ জন রেললাইনের কাছে পৌঁছয়। আশপাশের গ্রাম থেকে কিছু জোয়ান ছেলেকে জোর করে তুলে নিয়ে আসে তারা। ওই ছেলেরাই লাইনের প্যাোল ক্লিপ খুলে নেয়।”

পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, শুক্রবার রাতে জনগণের কমিটির কিছু কর্মী-সমর্থক সরডিহা স্টেশন লাগোয়া মানিকপাড়ার আখড়াশোলে জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে ছিল মাওবাদীরাও। তারাই ওই এলাকার বাসিন্দা রেলের কয়েক জন ঠিকা-কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে বাধ্য করে।

ডিজি জানান, প্যাোল ক্লিপকে স্থানীয় ভাষায় বল া হ ‘জিলিপি’। মাওবাদীরা নাশকতার আগে ওই ‘কোড’টি ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেই সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই পুলিশ সরডিহা ও মানিকপাড়া থেকে চার জনকে আটক করেছে।

দুর্ঘটনার আগের দিন মানিকপাড়াতেই মাওবাদী সন্দেহে সাত জনকে আটক করেছিল যৌথ বাহিনী। তার ‘বদলা’ নিতেই রাতারাতি রেললাইনে নাশকতার ছক কষা হয় বলে পুলিশের অনুমান। এক পুলিশকর্তা বলেন, “মানিকপাড়া মাওবাদীদের শক্ত ঘাটিঁ। সেখানে বিট হাউসে পুলিশের একটি শিবির আছে। আগেও বেশ কয়েক বার ওই শিবিরে জনগণের কমিটি হামলা চালায়। ওই এলাকায় কারা রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন, সেই খবর মাওবাদীদের কাছে ছিল। তাদেঁরই বেছে বেছে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী, যে খং (বড় হাতুড়ি) নিয়ে তাঁরা লাইনের কাজ করেন সেগুলিও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।” বন্দুকের মুখে ঠিকা-কর্মীরাই রেললাইনে নাশকতার ফাঁদ তৈরি করেন।

পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, রেলের ঠিকা কর্মীদরে নিয়ে মাওবাদীরা আখড়াশোল থেকে একটি পিক-আপ ভ্যানে চেপে পাকা রাস্তা দিয়ে সরডিহা পৌঁছয়। সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার মোরাম রাস্তা ধরে রাত ১২টা নাগাদ রাজাবাধেঁ আসে। রাজাবাধেঁ পৌছেঁ পিক-আপ ভ্যানটিকে ছেড়ে দেয় মাওবাদীরা। সেটি গুপ্তমণি হয়ে সাঁকরাইল যায়। সেখান থেকে বালিভাসা হয়ে মানিকপাড়া ফিরে আসে। ওই পিক-আপ ভ্যানটির নম্বর পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মাওবাদীরা রাজাবাধেঁ আসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখান দিয়ে হাওড়া-পোরবন্দর এক্সপ্রেস পেরোয়। আরও ১৫ মিনিট পরে যায় হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেস। তারও পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। পুলিশের অনুমান, রাত ১২টায় রাজাবাধেঁ পৌঁছলেও মাওবাদীরা রেললাইনের নাশকতার কাজ শুরু করে হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেস যাওয়ার পরেই। তার কারণ ওই ট্রেনের সঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী আসার ফাঁক ছিল অনেকটা। সেই সুযোগই নেয় মাওবাদীরা। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই লাইন দিয়ে যাতায়াতকারী ট্রেনের সময়সূচি মাওবাদীদের মুখস্থ।” প্রাথমিক তদন্তের পরে সিআইডি নিশ্চিত, রেললাইনে ৫০ মিটার জুড়ে প্যাোল ক্লিপ খোলার ফলেই বেলাইন হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। এবং ওই কাজ এখন মাওবাদীদের কাছে ‘জলভাত’ বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। পুলিশি রিপোর্ট বলছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম স্টেশনের অদূরে ঝাড়াগেড়িয়ায় প্যাোল ক্লিপ খুলে ৪০০ মিটার রেললাইন স্লিপার থেকে আলাদা করে দেয় মাওবাদীরা।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে রেল লাইনে কোনও বিস্ফোরণ মাওবাদীরা ঘটায়নি। কিন্তু ট্রেনচালক তাঁর এইআইআরে চাকার নীচে বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ডিজি-র বক্তব্য, “ছোটখাটো বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে সেটা নানা কারণে হতে পারে। কিন্তু বড় মাপের বিস্ফোরণ হলে তার যে পরিমাণ দৃশ্যমানতা থাকে, সরডিহায় তা দেখা যায়নি। এ কথা তো ঠিক, ছোট মাপের বিস্ফোরণে ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে না।”

নিহত ১৪৩
আহত ১৫০
শনাক্ত হয়েছে ৫৬ জন
ময়নাতদন্ত হয়েছে ৯৩ জনের
নিহতদের ছবি দেখা যাবে এই ওয়েবসাইটে:
www.cidwestbengal.gov.in

লাইনচ্যুত হয়ে ডাউন লাইনে এসে পড়া আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মেরেছিল যে মালগাড়িটি, তার চালক নির্ভয় কুমার শুক্রবার জানিয়েছিলেন, প্যান্ট-শার্ট পরা জনা সাতেক লোক দুর্ঘটনার পরে রেললাইনের পাশে দাড়িঁয়েছিল। তাদের হাতে বড় টর্চ ছিল। বাংলায় কথা বলছিল। নিজেদের মধ্যে কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল তারা। পুলিশের মতে, ওই জনা সাতেক লোকই নাশকতার ছক কষা মাওবাদী। এদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে খুব শীঘ্রই তদন্তকারী অফিসারেরা নির্ভয় কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, ওই রেললাইনের দেখভালকারী ১২ জন লাইনম্যানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোরেই রাজবাধেঁর ঘটনাস্থল থেকে জনগণের কমিটির নামাঙ্কিত একটি হাতে লেখা পোস্টার পেয়েছিল পুলিশ। কমিটির নেতাদের মধ্যে মোবাইলে কথোপকথনে আড়ি পেতেও যে তথ্য মিলেছে, তাতে দুর্ঘটনার পিছনে তাদের হাত থাকা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বলে দাবি রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, পুলিশ জেনেছে, বাপি মাহাতো নামে রাজাবাধেঁর এক কমিটি নেতা বৃহস্পতিবার রাতেই জনগণের কমিটির নেতা অসিত মাহাতোকে ফোন করে রেললাইনে ‘সর্বনাশ’-এর খবর দিয়েছিলেন। সেই তথ্য ধরেই নাশকতায় জড়িত কমিটির নেতা-কর্মীদরে খোজেঁ জোরদার তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকেদের তেমন ভাবে না আসাকেও মাওবাদীদের জড়িত থাকার বড় প্রমাণ হিসেবে দেখছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে কোনও দুর্ঘটনা হলে সবার আগে উদ্ধারকাজে হাত লাগান এলাকার মানুষই। কিন্তু সরডিহাতে তাদেঁর অনেকেই মাওবাদীদের প্রতি ভয়ে বা ভক্তিতে দুর্ঘটনাস্থলের ধারে কাছে যাননি।

কিন্তু মাওবাদীরা নিজেরা তো এই নাশকতার দায় অস্বীকার করেছে! ডিজি বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীকে মেরে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারলে তার দায় স্বীকার করে নেয় মাওবাদীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে তার দায় নেয় না।”

তবে সরডিহার ঘটনার পিছনে তাদেঁর কোনও হাত নেই বলে এ দিন ফের দাবি করেছেন অসিত মাহাতো। কমিটির পোস্টার উদ্ধার হওয়ার পর শুক্রবার সকালেই সংগঠনের এই প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সমস্ত ঘটনা শোনার পরে তাঁর মন্তব্য ছিল, “খোঁজ নিয়ে জানাব।” এর পরে অসিতবাবুর ফোন সারা দিন বন্ধই ছিল। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “কমিটি নেতার এমন মন্তব্য খুবই অস্বাভাবিক। জঙ্গলমহলের কোথায় কী হচ্ছে, কমিটির নেতারা তার খুটিঁনাটি জানেন।” শুক্রবার সন্ধ্যার মুখে ফের ফোনে যোগাযাগ করা যায় অসিতবাবুর সঙ্গে। প্রথমটায় অস্বস্তি জড়ানো গলায় ‘আন্তরিক ভাবে দুঃখিত’ বলে মন্তব্য করলেও পর মুহূর্তে দুর্ঘটনার সমস্ত দায় সিপিএমের উপরে চাপিয়ে দেন তিনি।

রেল নাশকতায় সি পি এমেরই হাত, ইঙ্গিত মমতার
সি বি আই তদন্তের দাবি মানতে রাজি কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পিছনে সি পি এমের হাত আছে বলে অভিযোগ করলেন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সি পি এমের নাম না করলেও তিনি প্রশ্ন তোলেন, একটি রাজনৈতিক দল ঘটনার পর এত তাড়াতাড়ি মাঠে নেমে পড়ল কী করে? তাদের পোস্টার, ব্যানার রাতারাতি এল কোথা থেকে? যখন স্টিফেন কোর্টে আগুন জ্বলেছে কিংবা উলুবেড়িয়ায় বাস দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন তো এদের দেখা যায়নি।

মমতার অভিযোগ, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের এতজন নিরীহ যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। পুরভোটের মুখে আমাকে জনসমক্ষে হেয় করতে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নেওয়া হল। আমি চাই, এই নাশকতার পূর্ণ তদন্ত করুক সি বি আই। সেই তদন্তে দোষীদের খুজেঁ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। রেলমন্ত্রীর দাবি, সি বি আই তদন্তের ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক করতে চলেছে। মমতার বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রেললাইনে কোনও ফিশপ্লেট খোলা হয়নি। আসলে ওখানে লাইনে ফিশপ্লেটই নেই। এটা লং ওয়েল্ডেড রেল ট্র্যাক। আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস যাওয়ার আগে পাইলট ইঞ্জিন চালানো হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাও উড়িয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পাইলট ইঞ্জিন ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার পর একটি মালগাড়ি সহ তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেন গিয়েছিল। জ্ঞানেশ্বরী যাওয়ার কয়েক মিনিট আগেই মালগাড়িটি পাস করে। বোমা বিস্ফোরণ যে হয়েছিল, সেটা জ্ঞানেশ্বরীর চালক বি কে দাস ঝাড়গ্রাম জি আর পি থানায় দায়ের করা এফ আই আরে উল্লেখ করেছেন। যাত্রীরাও আমাকে সেই কথা জানিয়েছেন।

মমতার অভিযোগ, একেবারে ছক সাজিয়ে এই নাশকতা ঘটানো হয়েছে। এটা একটা জঘন্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। তবে তদন্তে সব ধরা পড়ে যাবে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের দু’জন মন্ত্রী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বাদাম খেতে বসে গেলেন। তাঁদের লোকজনের খাবার এবং জল চলে এল। অথচ, ওখানে আমরা পানীয় জল পাইনি।

সি পি এমের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর আরও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ অন্য মন্ত্রীরা শোকের নাটক করছেন। কিন্তু স্টিফেন কোর্টে কিংবা উলুবেড়িয়ায় ঘটনার সময় তাঁদের দেখা যায়নি। তাছাড়া পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে রাতারাতি প্রচারের আয়োজন কী করে সি পি এম করল? আমি এলাকা থেকে অনেক তথ্য নিয়ে এসেছি। সি বি আই তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। এলাকাটা তো সি পি এমের হার্মদাদের দখলে।

পুরভোটে এই নাশকতার জবাব দিতে তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে রায় দেওয়ার আবেদন জানান। মমতা বলেন, শুধু এই ঘটনাই নয়, আমি রেলমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এরকম চক্রান্ত চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের কাছেও এভাবে লাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। অথচ, ওখানে তো আর মাওবাদী নেই।

মাওবাদীদের হটিয়ে আশপাশের কয়েকটি
গ্রামের দখল নিয়েছিল সি পি এম

দেবাঞ্জন দাস P সরডিহা (পশ্চিম মেদিনীপুর)

সরডিহা ও খেমাশুলি েস্টশনের মাঝে গ্যাসকাটার দিয়েই লাইনের দু’জায়গায় বেশ কিছুটা অশ কেটে নেওয়া হয়েছিল বলে তদেন্ত নেমে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। আপ লাইনের দুটি অশ কাটতে এব েপেণ্ড্রাল ক্লিপ খুলতে দুষ্কৃতীরা প্রায় ৪০ মিনিট সময় নিয়েছিল। নাশকতার কাজে যুক্ত ওই দলটিতে ২৫ থেকে ৩০ জন ছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। নানা বিষয়ের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখে নাশকতার এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীরাই যুক্ত, এখনই এমন কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধোন্ত আসতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। তেমনই, অন্য কেউ এই নাশকতার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের হটিয়ে বুধবারই সরডিহার ওই অশের দখল নিয়েছিল সি পি এম। লালগড় থেকে বিতাড়িত এক সি পি এম নেতার নেৃতেত্ব বুরজুটি, পাথরি, কোল্লা, কাঁকরাশোল এব গাইমারার মতো গ্রামগুলিতে বিরোধী দলের সমর্থক বলে পরিচিত বেশ কয়েকজনের বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। মাওবাদীদের ঠেকাতে বুরজুটি গ্রামে সশস্ত্র হার্মদাদের ক্যাম্প করে রাখা হয়েছে বলে খবর এসেছে গোয়েন্দাদের কাছেও। তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন, ওই এলাকায় ২৬ মে রাতে লালপার্টির বাছাই কর্মীদরে বৈঠকের এজেন্ডা নিয়েও।

সি পি এমের এই পাহারাদারদের উপিস্থতির মাঝে মাওবাদীরা কী ভাবে এতবড় ঘটনা ঘটাতে পারল, তাও খুজেঁ দেখা হচ্ছে। তাছাড়াও, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরিডহা থেকে সামান্য দূরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ের পর পালিয়ে যায় একদল মাওবাদী। যৌথ বাহিনী সেখানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সঘর্ষের পর সি আর পি থাকা সেত্ত্বও সিশ্লষ্ট এলাকায় মাওবাদীরা ফের বীরত্ব ফলাতে এসেছে, এমন দৃষ্টন্ত জঙ্গলমহলে নেই। তদেন্ত এই ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে পুলিশকে।

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার তদেন্ত নেমে গোয়েন্দারা হদিশ পেয়েছেন কয়েকজন গ্যাম্যানের। এঁরাই বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মতো সরডিহাখেমাশুলির মাঝের অশের লাইন পরীক্ষা করেছিলেন। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, গ্যাম্যানদের এই দলটিকে ভয় দেখিয়েই আপ ও ডাউন লাইনে প্রায় ২০০ মিটার অশের েপেণ্ড্রাল ক্লিপ খোলানো হয়েছিল। এই গ্যাম্যানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নাশকতার সঙ্গে যুক্তদের ব্যাপারে বাড়তি খবরাখবর মিলবে বলেও আশা করছে পুলিশ।

গোয়েন্দারা বলছেন, সরডিহা ও খেমাশুলির মাঝের ওই আপ লাইন দিয়ে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের আগে রাত পৌনে একটা নাগাদ গিয়েছিল রাঁচিহাতিয়া এক্সপ্রেস। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১টা ২৫ মিনিট নাগাদ। অর্থৎা দুটি েট্রনের মাঝের প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে নাশকতার ব্লু প্রিণ্ট তৈরি করা হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩৪/১১ ও ১৩৪/১২ রেল পেোস্টর মাঝে আপ লাইনের যে দুটি অশে লাইন কাটা হয়েছিল, তা গ্যাস কাটার ছাড়া কোনওভাবেই ওই সময়ের মধ্যে কাটা সম্ভব নয়। পূর্ব প্রস্তুতি এব আশপাশের গ্রামের লোকজনের সাহায্য ছাড়া এ কাজ অসম্ভব।

আরও একটি বিষয়ও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। তা হল, এর আগে যতবারই মাওবাদী এব সিুধুকানহু গণমিলিশিয়া কোনও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা দায় স্বীকার করে ঘটনাস্থলে পোস্টারও সেটেঁ দিয়েছে। সেই পোস্টারে লাল কালিতে নিতান্তই কাঁচা হাতে ভুল বানানে বয়ানগুলি লেখা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম নীল কালিতে বেশ পাকা হাতের লেখায় জনসাধারণের কমিটির নামে নাশকতার দায় স্বীকার করা পোক্রার মিলেছে সরডিহার দুর্ঘটনাক্ললে। গোয়েন্দারা বলছেন, তড়িঘড়ি নয়, ধীরেসুক্লে চিন্দাভাবনা করে লেখা হয়েছে দায় িীকারের ওই পোক্রার। এই বিষয়টিও তদন্দের কাজে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

Hানেশ্বরীতে নাশকতায়
মাওবাদীরা কাজে লাগিয়েছে রেলকর্মীদরে, ইঙ্গিত ডি জি’র

নিজি প্রতিনিধি, কলকাতা: শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনা মাওবাদীদের কাজ। ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই রাজ্য পুলিশের ডি জি ভূপিন্দর সিং শনিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা নিশ্চিত, এই কাজ অবশ্যই মাওবাদীরা করেছে। সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষও বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে, মাওবাদীরাই যুক্ত।

ধু তাই নয়, মাওবাদীরা এই কাজের জন্য রেলের লোকজনকে কাজে লাগিয়েছে ধরে নিয়ে সি আই ডি তদন্দ চালাচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ডি জি। তিনি বলেন, রেলের গ্যাংম্যানরা সাধারণত এলাকার লোক হন। অনেক জায়গাতেই ঠিকাদাররা তাদের নিয়োগ করে। তাদের উপর মাওবাদীদের প্রভাব থাকা অসম্ভব নয়। ডি জি জানিয়েছেন, রেলের ওই সব লোকদের সি আই ডি জেরা করছে।

এদিকে, নাশকতার কারণ সর্কে ক্রবার বিেত্মারণের সাবনা একপ্রকার উড়িয়ে দিয়েছিলেন ডি জি। কিচ্চ এদিন তিনি বলেন, বিেত্মারণ হয়ে থাকলেও তা বড়মাপের ছিল না এবঁি তা ৌঁন বেলাইন হওয়ার কারণ নয়। তাঁর বক্তব্য, জ্ঞানেশ্বরীর চালক যে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তা বাজির আওয়াজও হতে পারে। কোনও বিশেষ বার্তা হিসাবে মাওবাদীরা বাজি ফাটিয়ে থাকতে পারে বলে ডি জি দাবি করেন।

ৗঁন বেলাইন হওয়ার কারণ কি? ডি জি বলেন, কঁিক্রিটের িন্মপারের উপর রেললাইন আটকে রাখার জন্য যে েপোল ব্যবহার করা হয় ঘটনাক্ললে আপ এবঁি ডাউন দুই লাইনেই তার বেশ কিছু খোলা ছিল। ফলে যে কোনও লাইনেই ওই ঘটনা ঘটতে পারত। ঘটনাচক্রে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস আগে আসায় সেটি বেলাইন হয়। ইঞ্জিনটি মোটামুটি লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশ কয়েকটি বগি পাশের লাইনে উঠে যায়। সেগুলিতেই ধাক্কা মারে উলটো দিক থেকে আসা মালগাড়ি।

ক্রবার নিজে ঘটনাক্ললে গিয়েছিলেন ডি জি। সেখানেই তিনি বিেত্মারণের সাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ছিল বিেত্মারণ হলে মাটিতে অনেকটা গর্ত হওয়ার কথা। কিচ্চ ঘটনাক্ললে তা দেখা যায়নি।

এদিন মহাকরণে তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই দাবি করেন, মাওবাদীরা ছাড়া আর কেউ এই কাজ করেনি। তদন্দ শেষ হওয়ার আগেই তিনি এতটা জোর দিয়ে কী করে এ কথা বলছেন? ডি জি’র বক্তব্য, প্রাথমিক তদেন্দই কয়েকজনকে চিিত করা গিয়েছে যারা এই কাজ করেছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে মাওবাদীরা স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম থেকে যুবকদের তুলে নিয়ে যায়। ওই যুবকদেরই রেলের পেণ্ড্রোল ক্লিপ খোলার কাজে লাগানো হয়েছিল বলে ডি জি’র দাবি। তিনি বলেন, ওই এলাকায় মাওবাদীরা ধারাবাহিকভাবে নাশকতামূলক কাজ করে চলেছে।

নাম না করে কার্যত সি পি এমকেই
দায়ী করলেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পিছনে নাম না করে কার্যত সি পি এমকেই দায়ী করলেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাবাদিক বৈঠক করেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সেখানে শুভাপ্রসন্ন, সুনন্দ সান্যাল, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, শাঁওলি মিত্র, প্রসূন ভৌমিক, যোগেন চৌধুরি, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মূল বক্তব্য, পুরভোটের মাত্র দু’দিন আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। মাওবাদীরা এব পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি দাবি করেছে, এই কাজ তাদের নয়। তাহলে নিশ্চয়ই এই ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভবান হবে, তারাই উেদ্দশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সেটা যে কার্যত সি পি এম, তাও আকারইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন বুদ্ধিজীবীরা। তবে এরপরই সাবাদিকরা এনিয়ে পালটা প্রশ্ন করতে চাইলে বুদ্ধিজীবীরা উত্তর দিতে চাননি। এরপরই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ময়দান থানার পুলিশও প্রেস ক্লাবে যায়। পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের অন্য একটি ফোরাম শিল্পীসাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চও এই ঘটনার নিন্দা করে এর পিছনে অন্য কোনও ‘শক্তি’র হাত থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে।

এদিকে বুদ্ধিজীবীরা কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সাবাদিক বৈঠক না করলেও রাজ্য নির্বচান কমিশনের কাছে এনিয়ে অভিযোগ যায়। কমিনের সচিব এস এন রায়চৌধুরি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২৮ মে বিকাল ৩টের পর প্রকাশ্যে কেউ নির্বচানী প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু এই সাবাদিক বৈঠক চলাকালীন সি পি এমের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসে যে ওখানে নির্বচানী বিধি ভঙ্গ হচ্ছে। এরপর আমরা প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলি। পুলিশকে বলা হয়েছে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমকে এনিয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ময়দান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বচান কমিশন কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। সাবাদিক বৈঠক চলাকালীন যেভাবে পুলিশ প্রেস ক্লাবে ঢুকে পড়ে এব নির্বচান কমিশন যেভাবে এনিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, তার তীব্র নিন্দা করেছে প্রেস ক্লাব।

ঠিকাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে মাওবাদী-দুষ্কর্ম





অাজকালের প্রতিবেদন: কারা সরডিহায় নাশকতা ঘটাল সেই দল ও তার নেতাকে চিহ্নিত করা গেছে বলে দাবি করল রাজ্য পুলিস। সরডিহাতে রেল দুর্ঘটানার তদন্তে প্রাথমিকভবে কিছু সূত্র পেয়েছে সি অাই ডি-ও। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘটনার দিন সকালে একটি টাটা সুমোকে ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। রাজবাঁধ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের খালশিউলি গ্রাম। অার ৬ কিমি। দূরে বারমোল গ্রাম। মাওবাদী প্রভাবিত বলে ওই গ্রাম দুটি পরিচিত। সম্প্রতি সেখানে মাওবাদীরা বৈঠক করে। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা অারও জানতে পেরেছেন, রেল লাইনে কাজ করেন এমন বেশ কিছু ঠিকাকর্মী অাশপাশের কিছু গ্রামে থাকেন। উমাকান্ত ও বাপি নামে দুই মাওবাদী তাঁদের ভয় দেখিয়ে তুলে এনে পেনড্রোল খোলায়। দক্ষ কর্মী ছাড়া পেনড্রোল খোলা যায় না। মাওবাদীদের এই কাজে সহযোগিতা করেছিল জনসাধারণের কমিটি। ম্যানুয়াল সিগনাল দেখিয়ে ছিল গণ মিলিশিয়ার কমিটির কয়েকজন। এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। রেল জি অার পি-তে এফ অাই অারে মাওবাদীরা নাশকতা ঘটিয়েছে, এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করেনি। এফ অাই অারে নাশকতার ঘটনার কথা বলা হলেও, সন্দেহ কারও দিকেই নেই। পুলিস বলছে, সেদিন রাত ১১টা ৪০ মিনিটে অাপ লাইন দিয়ে একটি মালগাড়ি যায়। তার পর ১২টা ৪০ মিনিটে রাঁচি-হাতিয়া এ‘প্রেস যায়। তার পর রাত ১টা ১০ নাগাদ জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের সরডিহা স্টেশন পার হয়ে যাওয়ার কথা। রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুক্রবার সকালে জানিয়ে ছিলেন, জ্ঞানেশ্বরী যাওয়ার অাগে পাইলট ইঞ্জিন গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ৫০ মিটার লম্বা অাপ ও ডাউন লাইনের ‘পেনড্রোল ক্লিপ’ খোলা থাকলে পাইলট ইঞ্জিনের কোনও ক্ষতি হল না· রাঁচি-হাতিয়া এ‘প্রেস যাওয়ার অাধঘণ্টা পরেই জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেস পার হয়েছিল। তখনই দুর্ঘটনা। অাদৌ পাইলট ইঞ্জিন সেদিন কি ওই পথে গিয়েছিল· মাওবাদীরা অাধঘণ্টার মধ্যে দেড় মিটার লম্বা লোহার রেল ট্র্যাক কেটে নেয়। একশোর কাছাকাছি পেনড্রোল ক্লিপ খুলে নেয়। সি অাই ডি-র এক কর্তার বক্তব্য, মাওবাদীদের দলে পেনড্রোল ক্লিপ তাড়াতাড়ি খুলে নেওয়ার জন্য কোনও প্রশিিক্ষত লোক ছিল। রেল ট্র্যাক কাটতে ব্যবহার করা হয়েছিল বৈদ্যুতিন করাত। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শনিবার মহাকরণে ডিজি ভূপিন্দর সিং সাংবাদিকদের বলেন, রেল দুর্ঘটনা কীভাবে হয়েছে, কারা করেছে, এই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য অামাদের কাছে এসেছে। পেনড্রোল ক্লিপ শব্দের কোডশব্দ ব্যবহার করে তারা বলেছে ‘জিলেপি’। শুধু তাই নয়, যে দু’জনকে অাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা মাওবাদী অ্যাকশন স্কোয়াডে ঢুকেছে বলে খবর এসেছে। সাদা গাড়িতে কয়েকজন এসেছিল, গ্রামের কিছু ছেলেকে তারা রেল লাইনে পেনড্রোল খোলার কাজে লাগিয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা নেওয়া হয়েছে। একটা সামান্য শব্দ শোনা গেছে। এরাই ১২ অ’াবর রাজধানী এ‘প্রেস অাটকেছিল। রেলের লাইনের ভাঙা অংশটা দেখা হচেছ। কী সময়ে মালগাড়ি ছাড়া হয়েছিল, সেদিন যে ১২ জন লাইনসম্যান ছিল, তাদের বিষয়টি দেখা হচেছ। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহলে ১৫০ নিরীহ গরিব মানুষকে খুন করেছে মাওবাদীরা।


এফ অাই অাব়এ মাওবাদী নেই¯



সব্যসাচী সরকার ও সোমনাথ নন্দী ☞ সরডিহা




২৯ মে– জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেস থেকে এখনও পর্যন্ত ১৪১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাতে সংবাদ সংস্থা পি টি অাই সূত্রে খবর। শুক্রবার রাতভর দেহ উদ্ধার অভিযান চলেছে, শনিবারও চলল। উদ্ধারকারীরা এখনও অাশায় অাছেন যদি কেউ জীবিত থাকেন। এই রেল দুর্ঘটনার পেছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে বলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষ জানিয়েছেন। রাজ্য পুলিসের ডিজি ভূপিন্দর সিং জানান, ওই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গেছে। মাওবাদী ও জনসাধারণের কমিটি এই ঘটনায় যুক্ত। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। এদিকে মাওবাদীদের নাম উল্লেখ না করে ঝাড়গ্রাম জি অার পি-তে অভিযোগ দায়ের করেছে রেল। জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের চালক বি কে দাস এফ অাই অার করেছেন। পাশাপাশি, দুমড়ে যাওয়া রেল লাইন থেকে ধ্বংস হওয়া বগি সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলেছে। তবে, সে কাজে গতি কম। দুটি ক্রেন অাপ ও ডাউন লাইনে বসিয়ে কাজ চলছে। অানা হয়েছে নতুন রেল। পরিস্থিতি যা, খড়গপুর-ঝাড়গ্রাম লাইনে ট্রেন চলতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। ভয়ঙ্কর নাশকতার পর কংক্রিটের স্লিপার যেন বিস্কুটের মতো ভেঙে গেছে। শুক্রবার সারাদিনই চলেছে স্লিপার সরানোর কাজ। রেলের পদস্থ অাধিকারিকেরা এসেছেন। রাতভর উদ্ধার কাজের তদারকি করেছেন অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখার্জি। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্য থেকে অাত্মীয়রা পৌঁছচেছন সরডিহার অকুস্থলে। শনিবার সকাল থেকেই মৃতদেহের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শুক্রবার সন্ধেয় এস-৪ কামরা থেকে দু’জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। স্বজন হারানোর কান্নায় বাতাস ভারী সরডিহায়। উঠছে নানা অভিযোগ। উদ্ধার কাজে দেরি, কেন জীবিত বা মৃত জানা যাচেছ না, হেল্পলাইনে ফোন করে কেন উত্তর মিলছে না ইত্যাদি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিস। ঝাড়গ্রাম জি অার পি-তে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের কপি দেওয়া হয়েছে সি অাই ডি-কে।

রেল দপ্তরের ব্যাখ্যা

রেলের তরফে করা এফ অাই অারে মাওবাদী প্রসঙ্গ উল্লেখ না করার যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে দিক্ষণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অাধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার জানান, প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের চালক বি কে দাস তাঁর দেখা বিষয়ই এফ অাই অারে লিপিবদ্ধ করেছেন। ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কারা তা খোঁজার দায়িত্ব তদন্তকারী দল, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত সংস্থার। উদ্ধার, অাহতদের চিকিৎসা, মৃতদেহ হস্তান্তর বিষয়ে রেলের বিরুদ্ধে অাসা অভিযোগগুলোর উত্তরে তিনি জানান, দঃ পূঃ রেলের জি এম এবং অাধিকারিক-সহ হাজারের বেশি রেলকর্মী এই সব কাজে যুক্ত। তাদের তরফে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচেছ। অসুবিধের মধ্যেও বাতিল করা হয়নি মুম্বইগামী কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন।

উদ্ধারকাজে চরম অব্যবস্থা

শোকার্ত অাত্মীয়স্বজনদের প্রশ্ন একটাই, কোথায় গেলে জানতে পারব জীবিত না মৃত। মৃত হলে দেহ কোথায়। অভিযোগ, যে যে সংরিক্ষত কামরাগুলি দুর্ঘটনায় দুমড়ে গেছে, সেগুলির ‘রিজার্ভেশন চার্ট’ মিলিয়ে দেহ উদ্ধারে যথেষ্ট তৎপর নয় রেল। ভাঙা কামরার কাছে বহু মানুষ বারে বারে চলে অাসছেন বার্থ নম্বরে থাকা অাত্মীয়ের খোঁজে। একশোর বেশি মৃতদেহ উদ্ধার হলেও সমস্ত মৃতের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। অনেকেই চোখের জলে প্রশ্ন করছেন এই কামরাতেই তো ছিল¯ এক মহিলা অাকুল হয়ে কেঁদে চলেছেন। তাঁর স্বামী মৃত, অথচ দেহের সন্ধান তিনি পাচেছন না। বলছেন, ‘একবারও কী শেষ দেখা দেখতে পাব না’... এই প্রশ্নটিই ঘুরপাক খাচেছ অকুস্থল জুড়ে। গ্যাস কাটার দিয়ে বগি কেটে, অন্ধকার বগিতে টর্চ ফেলে দেহ খোঁজা হচেছ। হাসপাতালের চিত্র অারও শোকাবহ। অনেক দেহই অাঘাতে বিকৃত হয়ে গেছে। যাঁদের চিকিৎসা চলছে, তাঁরা কোন বগিতে ছিলেন– কখন উদ্ধার করে, কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, তার স্পষ্ট কোনও উত্তর রেলের কাছে পাচেছন না অাত্মীয়রা। যেমন অবস্থা হয়েছে যূথিকা অাটার। তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ অাটা মৃত। হাওড়ার বালটিকুরির বাসিন্দা। এস-৩ কামরায় ছিলেন। ভুসোয়াল যাচিছলেন। ৪ বছরের মেয়ে পৌলোমীকে নিয়ে। দুটি ক্রেন দিয়ে অতগুলি কামরা কবে সরানো যাবে, তার পর দেহ উদ্ধার হবে। রেলের উদাসীন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখার্জি বলেন, ওরা ওদের মতো কাজ করছে। সমন্বয় করে কাজ করছে না। মেডিক্যাল কলেজের একটা টিম রয়েছে। ওরা তাদের সঙ্গে কাজ না করে অালাদা ক্যাম্প খুলেছে। গোটা ব্যাপারটাই কোনওরকম তদারকি ছাড়াই চলছে। একটা সিস্টেমের যদি এই চেহারা হয়¯ ওরা তো রিজার্ভেশন লিস্টটাও এখনও দিয়ে উঠতে পারল না। শুক্রবার থেকে ঘটনাস্থলে রয়েছেন অসামরিক প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যা পরিস্থিতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ওই কোচ থেকে বাকি দেহ অার মিলবে কিনা সন্দেহ। হাত, পা, মাথা– বহু দেহেরই এমন চেপেট গেছে, যে উদ্ধার করাই সম্ভব নয়। এ যেন স্টিফেন কোর্টেরই এক পরিবর্তিত দৃশ্য। কোন যাত্রী কোথায় ছিলেন, তা যেমন অার অালাদা করা সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় বার্থ নম্বর খুঁজে পাওয়া। বহু দেহই প্রবল চাপে তালগোল পাকিয়ে গেছে। প্রবল ধাক্কার পরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়, তাতেও অনেকেই মারা গেছেন। ভেতরেও বিদ্যুৎস্পর্শে মৃত্যু ঘটেছে। ফরেনসিক দল নমুনা সংগ্রহ করেছে। যাঁদের দেহ শনাক্ত করা যাচেছ না, তাঁদের েক্ষত্রে ডি এন এ পরীক্ষা করা হবে। রবিবার ছুটির দিনে সেণ্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি খোলা রাখার জন্য বলেছে রাজ্য সরকার। দেহের দাবিদারদের রক্তের নমুনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ৩ কোটি টাকা

সরডিহায় রেল-দুর্ঘটনায় মৃতদের ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকার ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অাহতদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনতে জেলাশাসককে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করেছে সি অাই ডি. রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অসীম দাশগুপ্ত শনিবার মহাকরণে এ কথা জানান। রাজ্য সরকার নিহতদের মাথাপিছু ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অসীম দাশগুপ্ত এ বিষয়ে অালোচনা করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট জেলাশাসককে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে রেল- দুর্ঘটনার ব্যাপারে একটি মনিটরিং মিটিং করেন। বৈঠকে ছিলেন মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন, স্বরাষ্ট্র সচিব সমর ঘোষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় দপ্তরের সচিব মদনলাল মীনা, মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তা ডাঃ সোমেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং রাজ্যের অাই জি ছঅাইন-শৃঙ্খলাগ্গ সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। অর্থমন্ত্রী জানান, উদ্ধারের কাজ চলছে। সি অার পি এফ, রাজ্য পুলিস, কলকাতা পুলিস, রেলের কর্মী, এন ডি অার এস কাজ করছে। শুক্রবার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সি অার পি এফ এবং রাজ্য পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে দেয়। অাহতদের খড়গপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খড়গপুর রেল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এঁদের মধ্যে ১৪ জনকে কলকাতার এস এস কে এম এবং এন অার এস হাসপাতালে নিয়ে অাসা হয়েছে। ৫ জনকে অার জি কর়ে নিয়ে অাসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে রাজ্য সরকার। ওষুধ কেনার জন্য জেলাশাসককে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৭২ জনের ময়নাতদন্তের কাজ চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘটনার পেছনে মাওবাদীদের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই রকম ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অামরা ক্ষুদ্র রাজনীতি করি না। যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোই প্রথম কাজ। যাঁরা অাহত হয়েছেন তাঁরা যাতে ভালভাবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই দিকেই অামরা বিশেষ গুরুত্ব দিচিছ। রাজ্যের মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন বলেন, যাত্রী সুরক্ষার ব্যাপারে অামরা তো রেলের সঙ্গে ঘন ঘন মিটিং করেছি। সব ট্রেনে পাইলটিংয়ের কথাও বলেছি।


বিস্ফোরণই, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র অাছে: মমতা







অাজকালের প্রতিবেদন: নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি¯ এমনই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধেও। শনিবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে বসে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। যেখানে বসে রেলমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য পেশ করছিলেন, তার পেছনেই তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় প্রতীক জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, খতিয়ে দেখা হচেছ বিষয়টি। রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন সি পি এম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। চিঠিতে বিমান বসু বলেছেন, রেলের নাশকতার ঘটনা নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় রেলমন্ত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুর নির্বাচনের বিষয়টিকে যুক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি যেখানে বসে ছিলেন তার পেছনে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্র উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কর্তৃক নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন বিমানবাবু। চিঠি দেওয়ার অাগে সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন ফোনে নির্বাচন কমিশনকে সি পি এমের পক্ষ থেকে মৌখিক অভিযোগও জানানো হয়। সাংবাদিকদের কাছে এদিন মমতা বলেন, বিস্ফোরণের জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার কারণ জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের চালক এফ অাই অারে বলেছেন বিস্ফোরণের জন্যই এই দুর্ঘটনা হয়েছে। মাওবাদী তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ঘটনার পেছনে কারা যুক্ত তার তদন্ত তো পুলিসের করা উচিত। ড্রাইভার কী করে বলবেন মাওবাদীরা করেছে না কে করেছে। চালকের পেক্ষ তা বলা সম্ভব নয়। তিনি কী করে জানবেন· তিনি তো ট্রেন চালাচিছলেন। মমতা বলেন, ফিশপ্লেট খোলা ছিল না। গ্যাস কাটার দিয়েও রেললাইন কাটা যায় না। এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। সি বি অাই তদন্ত চেয়েছি এই কারণেই। প্রকৃত সত্য বের হবে বলেই। মমতার অভিযোগ, ঘটনার পর যে মন্ত্রীদের কখনও চোখে দেখা যায় না সেই ৪।৫ জন মন্ত্রী হঠাৎ করে ঘটনাস্থলে চলে গেলেন। ভোটের দু’দিন অাগে জঘন্য চক্রান্ত করা হয়েছে। অামাকে প্রচার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ক্যালকুলেশন করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সি বি অাই তদন্ত হলে সব বেরিয়ে অাসবে। ঘটনার পরেই শোক মিছিল বেরিয়ে পড়ল। বোঝা যাচেছ কী হয়েছে। অামি তো শুনেছি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অামি যে সি বি অাই তদন্ত চেয়েছি তাতে সহমত হয়েছেন। মমতা বলেন, স্টিফেন কোর্টে যখন এত লোক মারা গেলেন তখন তো শোকমিছিল বের হল না। ঘৃণ্য অপরাধ করেও শোকমিছিল বের করা হয়। যাত্রী তালিকা তো টাঙানোই থাকে। না দেওয়ার তো কিছু নেই। ওদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে সকাল-সকাল প্রত্যেককে ভোট দেওয়ার জন্য অাবেদন জানিয়েছেন তিনি। মমতার বক্তব্য, কোনও গুজবে কান দেবেন না। ঘটনার জন্য তিনি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সি পি এম-কেই দায়ী করেছেন। এদিন কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মানস ভুইয়াঁ প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে বসে বলেন, রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বড্ডবেশি রাজনীতি হচেছ। রাজনীতি বন্ধ করার অাবেদন জানান তিনি। মানসবাবু মনে করেন এই সময় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোটাই কর্তব্য। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঘটনার উচচপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ও রেলের মধ্যে কোনও সম্বন্বয় যে নেই এই ঘটনাই তার প্রমাণ। এই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি যাঁরা করছেন তাঁদের ধিক্কার জানাই।

ব়েল দুর্ঘটনা নিয়ে সুশীল সমাজেব় ভূমিকা সমর্থন কব়েন·





সৌমিত্র দাস: কাঁথি, ২৯ মে– ঝাড়গ্রামের সরডিহার কায়দায় এবার দীঘা-তমলুক রেলপথে নাশকতার চেষ্টা। কাঁথি রেল স্টেশনের অনতিদূরে কৃষ্ণচক বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের পাশে গিমাগেড়িয়ায় দীঘাগামী রেলপথে ৫৮-৫৯ কিমির মধ্যে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে প্রায় শতাধিক ‘পেনড্রোল ক্লিপ’ খুলে দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার ভোরে দীঘা-সাঁতরাগাছি লোকাল ট্রেনটি কপালজোরে অকুস্থল পেরিয়ে যায়। রেল অাধিকারিকদের মতে, দুষ্কৃতীরা বিিক্ষপ্তভাবে পেনড্রোল ক্লিপ খোলায় ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। রেলপথের দু’পাশে লোহার রেলপাতের সঙ্গে সিমেণ্টের স্লিপারগুলিকে অাটকে রাখার জন্য এই পেনড্রোল ক্লিপ লাগানো থাকে। দুষ্কৃতীরা নিছক চুরির জন্য যে এগুলি খুলে ফেলেনি, তার বড় প্রমাণ পেনড্রোল ক্লিপ রেললাইনের পাশেই পড়ে ছিল। শুক্রবার ভোরে দীঘা-সাঁতরাগাছি ট্রেন চলে যাওয়ার পর ঘটনাটি গ্রামবাসীদের নজরে অাসে। গ্রামবাসীরাই কাঁথি থানায় জানান। খবর পেয়ে রেলের অাধিকারিকরা ঘটনাস্থলে অাসেন। দীঘা রেল পুলিসের ভারপ্রাপ্ত ওসি গণেশচন্দ্র করণ কাঁথি থানায় এফ অাই অার দায়ের করেছেন। পুলিস ও রেল দপ্তরের মতে, এেক্ষত্রেও একই নাশকতার ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। শনিবার রেল দপ্তর খুলে ফেলা ক্লিপগুলি লাগানোর ব্যবস্থা করে। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অপরিচিত লোকজনকে রেলপথের পাশে ঘুরতে দেখা যায়। ওসি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।