Thursday, August 26, 2010

পরিবেশ বিপর্যয় ও সিএনজির মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গ

ড. তারেক শামসুর রেহমান


Published: 2010-07-14


বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যখন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজির দাম বাড়ানো হবে। আগামী রমজানের পরপরই এই মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করা হবে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ। সিএনজি সাধারণত গাড়িতে ব্যবহৃত হয়। সরকার পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারে উৎসাহিত করেছিল। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত সেদিন প্রশংসিত হয়েছিল। গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারের ফলে ডিজেল ও অকটেনের ব্যবহার হ্রাস পায়। এর মধ্য দিয়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনও কিছুটা হ্রাস পায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বাড়ছে এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী বিশাল এক এলাকা সাগরগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, এখন সিএনজির মূল্য বৃদ্ধির ফলে ডিজেল ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধিতে তা আরো সাহায্য করবে। যাঁরা সিএনজির মূল্য বৃদ্ধি করতে চাইছেন, তাঁরা কিছু বিষয় বিবেচনায় নেননি। প্রথমত, সিএনজির দাম বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব খুব একটা বাড়বে না। কেননা দেশে উৎপাদিত গ্যাসের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় এ খাতে। দ্বিতীয়ত, সিএনজির দাম বাড়ালে গাড়িতে ডিজেল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। ফলে এই সেক্টরে কর্মরত প্রায় ২০ হাজার লোকের একটা বড় অংশ চাকরি হারাবে। কেননা দাম বাড়লে সিএনজির ব্যবহার কমে যাবে। দেশে ৫৬৫টি রি-ফুয়েলিং স্টেশন ও ১৬২টি রূপান্তর কারখানার অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, অতিরিক্ত ডিজেল ব্যবহারের ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে মারাত্দকভাবে এবং বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। চতুর্থত, ডিজেল ব্যবহারের ফলে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা আরো বাড়বে।

বাংলাদেশে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৯৮৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। আমদানির এ পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছেই। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টন। আর আমদানি মূল্য ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ টন অপরিশোধিত তেলের মূল্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা (প্রতি এক লাখ টনের দাম ২৫৫ কোটি টাকা হিসাবে) এবং অবশিষ্ট ২৫ লাখ টন পরিশোধিত তেলের মূল্য ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা (প্রতি এক লাখ টনের দাম ৩৭৫ কোটি টাকা হিসাবে)। তা ছাড়া প্রতি মাসে জ্বালানি তেল আমদানিতে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার দরকার হতো। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন দরকার এক হাজার ৬০০ কোটি থেকে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বাড়তি দামের কারণে বিপিসির মাসিক লোকসানের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকা। বিপিসি বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করায় লোকসানও বাড়ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) খরচ ও দেনা বাড়ছে। প্রতি মাসে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করে বিপিসি। এতে যে অর্থ ব্যয় হয় তার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন ডলার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থ থেকে পরিশোধ করে। ২৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয় আইডিবি ঋণ থেকে। বাকি ৮৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক ওডির মাধ্যমে পরিশোধ করে। এই পরিসংখ্যান ২০০৮ সালের।

অনেকের মনে থাকার কথা, ২০০৮ সালের শেষের দিকে পেট্রোবাংলা অর্থসংকট কাটাতে সরকারের কাছে এক হাজার ৯০৫ কোটি টাকা চেয়েছিল। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় বিদেশি কম্পানিগুলো থেকে তারা তেল ও গ্যাস কিনতে পারছিল না। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে উচ্চ সুদে তাদের ঋণ নিতে হয়েছিল। আইডিবি থেকে নিতে হয়েছিল ২০০ মিলিয়ন ডলার আর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে নিতে হয়েছিল ৩০ কোটি ডলার। সুদের হার ছিল ৫ দশমিক ৫৫ ডলার (আমার দেশ, ১৯ এপ্রিল, ২০০৮)। এখন সিএনজির দাম বাড়লে, খুব স্বাভাবিক কারণেই যাঁরা গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার করেন, তাঁরা আবার পেট্রল বা অকটেনে ফিরে যাবেন। এর ফলে চাহিদা বাড়বে। আর চাহিদা বাড়লে সরকারের আমদানিও বাড়বে। তাতে করে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে। একপর্যায়ে ভর্তুকি কমাতে সরকারকে তেলের দাম বাড়াতে হবে, যা কিনা সামগ্রিক অর্থনীতিকে একটি নেতিবাচক প্রশ্নে ফেলতে পারে। প্রসঙ্গক্রমেই বলে রাখি, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও খাদ্য খাতে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকি দিতে হয়েছে। শুধু তেল আমদানিতেই সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এটা আমাদের নিরাপত্তাকে যে কতটুকু ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

গত ছয় বছরে দেশে ১০ বার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০০৬ সালের ৮ জুন জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে অকটেন ৫৮ টাকা ও পেট্রল ৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর বর্তমানে অকটেন ও পেট্রল বিক্রি হয় যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ টাকায়। এখন অকটেন বা পেট্রলের চাহিদা বেড়ে গেলে সরকারকে দাম বাড়াতে হবে, যা কিনা দেশের মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর (?) ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নতুন অস্থিরতা তৈরি হবে। মূল্য বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কৃষকরা। কেননা জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হলে অকটেন, পেট্রলের পাশাপাশি ডিজেলের দামও বাড়াতে হবে। আর এটা করা হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে চরম সংকট তৈরি করবে। দেশে বর্তমানে ২৬ লাখ টন ডিজেল ব্যবহৃত হয়। বোরো মৌসুমে প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ৩৩ লাখ হেক্টরে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ধান উৎপন্ন করা হয়। কৃষিতে ২৫ শতাংশ ডিজেল ব্যবহৃত হয়। বাকি ডিজেলের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পোড়ানো হয় পরিবহন খাতে।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩৮ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৯৮৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর হয়নি। প্রতিবছরই তেলের পেছনে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। সরকারি সূত্র অনুযায়ী ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ হয়েছিল ১৭০ কোটি ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ১৯৩ কোটি ডলার। আর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অর্থের পরিমাণ আরো এক ধাপ বেড়ে যায়। অর্থাৎ দিনে দিনে অর্থের পরিমাণ বাড়ছেই। ১৯৮৮ সালে জ্বালানি তেলের দাম ছিল মাত্র ১০ ডলার (ব্যারেল)। ২০ বছরের ব্যবধানে এ দাম ব্যারেলপ্রতি ১৪৬ ডলারে উঠলেও বর্তমানে তা কমে ৭০ থেকে ৮০ ডলারের মধ্যে অবস্থান করছে। তেলের দাম কমার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে, যাতে করে মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে। ১৯৯৮ সালে বিশ্বে প্রতিদিন তেলের চাহিদা ছিল সোয়া দুই কোটি ব্যারেল। বর্তমান এ চাহিদা আট কোটি ব্যারেল ছাড়িয়ে গেছে। চীন ও ভারতের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দুটি দেশের পক্ষে অধিক মূল্য দিয়ে জ্বালানি তেল কেনা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ? বাংলাদেশের পক্ষে তো সম্ভব নয়।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিরও একটা সম্পর্ক রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে, ফলে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ শতাংশ। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়লে শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য খাত থেকে বিনিয়োগ সরে যাবে। কেননা ভর্তুকি প্রত্যাহার করা নীতিগতভাবে একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কোনো রাজনৈতিক সরকারই ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে চায় না জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে। ২০০৮ সালের মে মাসে ইন্দোনেশিয়া তেলের দাম ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছিল। ভারতও বাড়িয়েছিল; যার প্রতিবাদে ভারতে বামপন্থীদের আহ্বানে হরতাল পর্যন্ত হয়েছিল। সুতরাং আজ যাঁরা সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রকারান্তরে তেলের দাম বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে বাধ্য করছেন, তাঁদের এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এই মুহূর্তে সরকারকে অজনপ্রিয় করে তোলার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের সুবিধাভোগী আমলারা অতীতে কোনোদিন জনস্বার্থে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমন কোনো রেকর্ড নেই। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সুতরাং জনপ্রতিনিধিরা সিএনজির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সামগ্রিক দৃষ্টিতে দেখবেন, এটা আশা করছি।

আরো একটি কথা বিবেচনায় নিতে হবে, তা হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। গ্যাসের বদলে মানুষ যদি আবারও পরিবহনে আমদানিকৃত অকটেন ও ডিজেল ব্যবহার করে, তাতে করে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এমনিতেই বাংলাদেশ বিশ্ব পরিবেশ দূষণের শিকার। বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও ব্যবহারের কারণে। জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল, গ্যাস ও কয়লা ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে। আর এতে করে মরুর বরফ গলছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের বিশাল এলাকা আজ সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহার করে পরিবেশকে আরো দূষিত করতে পারে না। তাই কোনো অবস্থাতেই সিএনজির দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। শত শত সরকারি গাড়িও এখন সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এখন দাম বাড়ানো হলে সুবিধাভোগীরা আবার গাড়িতে তেল ব্যবহারের যুক্তি তুলবেন। তাতে করে সরকারের খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে পরিবেশ দূষণ। বাংলাদেশ যেখানে আন্তর্জাতিক আসরে বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে তার ক্ষতির কথা বলছে, সেখানে পরোক্ষভাবে জ্বালানি তেল ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে পরিবেশকে আরো দূষিত করতে পারে না। বিশ্বব্যাপী 'গ্রিন এনার্জি' ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে গ্রিন এনার্জি ব্যবহারকে সীমিত করে দেবে। আমি তাই মনে করি, সিএনজির দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। বরং সিএনজি ব্যবহারের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রায় ষোল কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। নূ্যনতম জ্বালানি প্রাপ্তি আমাদের অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে যদি আমরা আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাই, তা শুধু পরিবেশের দূষণের মাত্রা বাড়াবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
(সুত্র,কালের কন্ঠ, ১৪/০৭/২০১০)

আমেরিকায় পেট্রল ৩০ টাকা লিটার, এখানে নয় কেন

প্রবন্ধ ১...

আমেরিকায় পেট্রল ৩০ টাকা লিটার, এখানে নয় কেন

যদি আন্তর্জাতিক বাজারের দামে আমরা পেট্রল কিনতে না পারি, তা হলে ‘বিনিয়ন্ত্রণ’
নিয়ে ঢাক পিটিয়ে লাভ কী? কেন্দ্রীয় সরকারের পেট্রো-পণ্য নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন

সুগত মারজিৎ

বারের বর্ষায় ভাল বৃষ্টি হবে, এ রকম একটা আশা করলেও পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এ দেশে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হার খানিকটা বাড়িয়ে তুলবেই। সরকার বলছে, দেশে পেট্রলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হল। তা হলে কি এ বারে বিশ্বের বাজারে তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও মূল্যস্তর নির্ধারিত হবে? বাইরে দাম বাড়লে দেশেও দাম বাড়বে, কমলে কমবে? সরকার একটা কথা বার বার মনে করিয়ে দেয়। কম দামে পেট্রল-ডিজেল বিক্রি হলে দেশের তেল কোম্পানিগুলির প্রভূত ক্ষতি হয়, সরকারকে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয়, শুধু শুধু অত ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মূলত রান্নার গ্যাস এবং কেরোসিন কম দামে বিক্রি করার জন্য কোম্পানিগুলিকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই ক্ষতি লাঘব করার জন্য তেলের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।

উদারনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনে বাজারমুখী নীতির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে সংস্কারের যুক্তি যে রকম যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, এগুলো যুক্তি নয়, অজুহাত। তেলের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের যে প্রভূত ক্ষতি হয়, ভবিষ্যৎ মূল্যবৃদ্ধির হারকে উসকে দিয়ে সরকার সামগ্রিক ভাবে দেশকে যে সমস্যার মুখে দাঁড় করাচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাফাই গাইবার জন্যই যেন ‘সংস্কার’, ‘বিনিয়ন্ত্রণ’, ‘ভর্তুকি হ্রাস’ ইত্যাদি অজুহাত খোলামকুচির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি কমিটির রিপোর্টের কথাও বার বার শোনানো হচ্ছে, যে কমিটি দেশের ভিতরে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেঁধে দেওয়ার কথা বলেছে। মনে হতে পারে, আমরা বোধহয় ধীরে ধীরে সে দিকেই যাচ্ছি।

ভূমিশয্যা। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ। নয়াদিল্লি, ২০১০। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা

সরকারের বাইরে বা ভিতরে যাঁরা তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করছেন, তাঁরা হয়তো সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়েই বেশি চিন্তিত। বিশেষ করে দিনের পর দিন খাদ্যদ্রব্যের আকাশছোঁয়া দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেল-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দেশে সরকারি ভাবে স্বীকৃত প্রায় ত্রিশ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষকে কোন আশার বাণী শোনাবে, জানা নেই। কিন্তু সেই দুশ্চিন্তা সরিয়ে রাখলেও, নিতান্ত যুক্তির খাতিরে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কতটা নিয়ন্ত্রণহীন বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত, সে বিষয়েও বিলক্ষণ সন্দেহের অবকাশ আছে।

অপরিশোধিত পেট্রলের মূল্য বিশ্বের বাজারে ২২ টাকার কাছাকাছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুচরো তেলের দাম সবচেয়ে বেশি ক্যালিফর্নিয়ায়— পরিশোধনের ব্যয়, পরিবহণ খরচ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কর, সব নিয়ে তেলের দাম পড়ে লিটার প্রতি ৩০ টাকা মতো। হ্যাঁ, বিগত চার-পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। বেড়ে হয়েছে লিটার প্রতি ৩০ টাকা। ডিজেলের দামও মোটামুটি ওই রকম। কেরোসিন বা রান্নার গ্যাসের উৎপাদন বা জোগানের খরচ এবং বাজার দামের মধ্যে আমাদের দেশে ফারাক আছে, তাই ভর্তুকির প্রয়োজন, সেটা বোঝা গেল। কিন্তু পেট্রলের দাম যে কী করে বিদেশের বাজারের সঙ্গে এক হয়ে এক নিয়ন্ত্রণহীন জমানার সূচনা করল সেটা বোঝা গেল না, যাবেও না কোনও দিন। মার্কিন মুলুকে পরিশোধন ও পরিবহণের খরচ আমাদের তুলনায় কম বলেই হয়তো সে দেশে পেট্রলের দাম ৩০ টাকায় রাখা গিয়েছে। কিন্তু একটা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে পেট্রলের ওপর লিটার প্রতি ২৫ টাকা মতো কর চাপানো হচ্ছে, আর ডিজেলের ওপর আমরা ১০ টাকার কাছাকাছি কর বসাচ্ছি।

অপরিশোধিত তেল বিদেশ থেকে আমদানির পর তা দেশের ভিতর বিক্রি করে দেশের তেল কোম্পানিগুলো। কোনটা বিশ্বের বাজারের ঠিক দাম, যদি সে দাম লিটার প্রতি ৩০ টাকার কাছাকাছি হয়, তা হলে নিয়ন্ত্রণ থাক বা না থাক, মানুষ কী সুবিধে পাচ্ছেন? কিছুই পাচ্ছেন না। আজ যদি বাইরের দাম ৩০ থেকে ২৫ টাকা হয়, সরকার ৫ টাকা কর বাড়িয়ে দেবেন। আমাদের ঘাড়ে যদি বিশাল করভার চাপিয়েই চলা হয়, তা হলে কী হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশের ভিতরে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণহীন করা হল? তেলের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হল, এ কথা বলার কোনও যুক্তিই নেই, কারণ সরকার ইচ্ছে মতো কর চাপিয়ে সেই দাম নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বিশ্বের বাজারে যদি ৩০ টাকা লিটার দরে তেল পাওয়া যায়, তা হলে আমরাও ওই দরে তেল কিনতে পারব— এটাই যথার্থ নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের পরিচায়ক। সরকার কোনও দিনই নিয়ন্ত্রণহীনতায় বিশ্বাস করে না। আর, তেল না কিনে মানুষের উপায় নেই, তাই সরকার যথেচ্ছ কর বসালেও মানুষ তা দিতে বাধ্য। সরকারের পোয়া বারো, প্রচুর রাজস্ব।

আর একটা কথা এখানে বলা দরকার। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে অনেক দিন সারা পৃথিবীতেই খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশ কমে এসেছিল, অথচ আমাদের দেশে তা বেড়েছিল তরতর করে। সরকার যদি সত্যিই মুক্তবাণিজ্যে আস্থাভাজন হত, তা হলে খাবারদাবারের দাম কমে আসত খানিকটা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের নীতি অনুসৃত হয়েছে, যাতে দেশের ভিতরে খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফা হয়। এটাই এটা অবাঞ্ছিত, কিন্তু এটাই হয়।

বিনিয়ন্ত্রিত উদারমনস্ক বাজারের চরম শত্রু একচেটিয়া কারবার, অর্থাৎ বাজারের ওপর একটি বা অল্প কয়েকটি কোম্পানির একচ্ছত্র আধিপত্য। প্রতিযোগিতার পথ বন্ধ করে দেওয়া নিয়ন্ত্রণের চরম উদাহরণ। আমাদের দেশে পেট্রোপণ্যের বাজারের অবস্থা ঠিক ওই রকম। প্রতিযোগিতা থাকলে বিদেশের অনেক কোম্পানি এখানে তেল বিক্রি করত। এক সময় কিন্তু আমাদের দেশে অনেক বিদেশি তেল কোম্পানি ছিল। এতই যদি ‘মুক্ত বাণিজ্য’ বলে উল্লম্ফন, তা হলে প্রতিযোগিতা বাড়ানো যায় না কেন? যায় না, কারণ তা হলে এ দেশের সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর এত রমরমা হত না। মার্কিন মুলুকে দু’চার মাইলের মধ্যে অবস্থিত পেট্রল-ডিজেলের স্টেশনের মধ্যে দামের ফারাক হতেই পারে। কারণ— প্রতিযোগিতা। আমরা এতটাই হতভাগ্য যে জানতেই পারি না, আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো এমন সংরক্ষিত বাজারে, এত শিশুসুলভ সুরক্ষার মধ্যে থাকলেও কেন মুনাফা করতে পারে না। গাদা গাদা ঐরাবত পুষে আমরা দেশের কী উপকার করছি? সরকারি তেল কোম্পানিগুলির অদক্ষতা, অনাবশ্যক খরচ করার প্রবণতা, দুর্নীতির সংকেত, এ সব নিয়ে কি আমরা কোনও শ্বেতপত্র দেখেছি? এটা কি ঠিক যে, যদি কোনও কর না থাকত, কোনও ভর্তুকি না থাকত, কোনও হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ না থাকত, তা হলে আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো ৩০ টাকা লিটার দরে পেট্রল বিক্রি করত? যদি না করতে পারত, তা হলে জানা উচিত, তাদের উৎপাদন এবং পরিষেবার খরচ বিশ্বের বাজারের তুলনায় কতটা বেশি এবং কার দোষে তা বেশি।

এ বার দেখা যাক, নিয়ন্ত্রণহীন তেলের বাজার কেমন হওয়া উচিত, সে জন্য পেট্রোপণ্যের যথাযথ নীতিই বা কেমন হওয়া দরকার। এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই, অর্থনীতির যুক্তিটাই একমাত্র কথা।

(১) প্রথমে পূর্ণ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। স্বদেশি বিদেশি অনেক কোম্পানি দেশে তেল বিক্রি করতে পারবে। তাতে পেট্রল-ডিজেলের দাম কী হয়, সেটা দেখতে হবে।

(২) সরকার যদি রান্নার গ্যাস, কেরোসিন বা ডিজেলে ভর্তুকি দিতে চায়, তা হলে স্বদেশি এবং বিদেশি, সব কোম্পানিই তা পাবে। যদি সরকার কর বাড়াতে চায়, তা হলেও সব কোম্পানির ওপর তা সমান ভাবে বসবে।

(৩) সরকারি কোম্পানিগুলি ভর্তুকি ছাড়া চালানো না গেলে দেখতে হবে কেন তারা এত অদক্ষ। প্রয়োজনে তাদের কলেবর কমাতে হবে। বিদেশি কোম্পানির প্রতিযোগিতা থাকলে দেশের কোম্পানিগুলিও সতর্ক হবে।

(৪) মানুষের পেট্রোপণ্য না কিনে উপায় নেই বলে সরকার যথেচ্ছ কর বসাবে, এটা যুক্তির কথা হতে পারে না। দেখতে হবে, অন্য কোথায় কর ছাড় বন্ধ করে বা কমিয়ে পেট্রোপণ্যের কর কমানো যায়। এখানে প্রতিবাদীদেরও দায়িত্ব আছে। আজ ডিজেল, কেরোসিন বা রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর যে দাবি বিরোধী এবং সরকার পক্ষের দলগুলো করছে, সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে যদি তারা দেখাতে পারে, অন্য কোথায় কর ছাড়ের মাত্রা কমানো যেত। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার বোঝানো যাবে।

অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা জানেন, সাম্প্রতিক কালে ভারতের শিল্পে তেমন মন্দা আসেনি। বিশ্ব অর্থনীতির চরম মন্দার সময়েও আমরা বেশ ভাল ফল করেছি। এর পিছনে সরকারি সহযোগিতার একটা বড় ভূমিকা আছে। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার শিল্পকে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে ষাট হাজার কোটি টাকা ছাড় দিয়েছিল। পাশাপাশি, কৃষিতে প্রচুর ঋণ মকুব করা হয়েছিল। মনে রাখতে হবে, অতি দরিদ্র কৃষকরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান না, ঋণ নেন এবং পান প্রধানত মাঝারি অবস্থার কৃষিজীবীরা। অর্থাৎ, কৃষি ও শিল্পে সরকার যে সহযোগিতা করেছিল, যথার্থ দরিদ্ররা তার সুফল বিশেষ পাননি। যদি ওই সহযোগিতার অঙ্ক কমিয়ে সেই পরিমাণ টাকাটা কেরোসিন, রান্নার গ্যাস বা ডিজেলের দামে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হত, তা হলে বোঝা যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। শিল্পে যা কর-ছাড় দেওয়া হয়েছিল, জিনিসপত্রের দামে তার কোনও প্রভাব পড়েছিল কি না জানা নেই। যদি তা না হয়ে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে কেবল শিল্পপতিদের মুনাফাই বেড়েছিল। তা হলে, যে মানুষটা একটা ছোট ম্যাটাডর চালিয়ে শহরে তরিতরকারি পৌঁছে দেন, তাঁর ডিজেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের কোন উপকারটা হল?

লেখক অর্থনীতিবিদ, কলকাতায় সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস-এর অধিকর্তা। মতামত ব্যক্তিগত

Sunday, May 30, 2010

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা

রেল ঠিকা-কর্মী দিয়েই নাশকতা মাওবাদীদের

বৃহস্পতিবার রাতে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই নাশকতার পিছনে রয়েছে মাওবাদীরাই। পুলিশ কী ভাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে শনিবার তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ভূপিন্দর সিংহ। কিন্তু শুক্রবার রেলের তরফে ঝাড়গ্রাম জিআরপি থানায় যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। অভিযোগ করা হয়নি পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির বিরুদ্ধেও।

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের চালক বিভয়কুমার দাস শুক্রবার সন্ধ্যায় এফআইআর দায়ের করেছেন জানিয়ে এডিজি (রেল) দিলীপ মিত্র শনিবার বলেন, ওই এফআইআরে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ কর া হনি

সে ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে মাওবাদীদের দায়ী করছে পুলিশ?

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে লোক জড়ো করা, লাইনের ক্লিপ খোলার জন্য রেলের ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া এবং নাশকতার পরে তাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের যে তথ্য মিলেছে, তার ভিত্তিতেই পুলিশ মাওবাদীদের ভূমিকা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌছেঁছে। স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষ এ দিন স্পষ্ট করেই বলেন, “রাজ্য মনে করছে, নাশকতার পিছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে।”

ভূপিন্দর সিংহ শনিবার বলেন, “দুর্ঘটনার আগে একটি ভাড়া করা পিক-আপ ভ্যানে চেপে ১০-১২ জন রেললাইনের কাছে পৌঁছয়। আশপাশের গ্রাম থেকে কিছু জোয়ান ছেলেকে জোর করে তুলে নিয়ে আসে তারা। ওই ছেলেরাই লাইনের প্যাোল ক্লিপ খুলে নেয়।”

পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, শুক্রবার রাতে জনগণের কমিটির কিছু কর্মী-সমর্থক সরডিহা স্টেশন লাগোয়া মানিকপাড়ার আখড়াশোলে জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে ছিল মাওবাদীরাও। তারাই ওই এলাকার বাসিন্দা রেলের কয়েক জন ঠিকা-কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে বাধ্য করে।

ডিজি জানান, প্যাোল ক্লিপকে স্থানীয় ভাষায় বল া হ ‘জিলিপি’। মাওবাদীরা নাশকতার আগে ওই ‘কোড’টি ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেই সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই পুলিশ সরডিহা ও মানিকপাড়া থেকে চার জনকে আটক করেছে।

দুর্ঘটনার আগের দিন মানিকপাড়াতেই মাওবাদী সন্দেহে সাত জনকে আটক করেছিল যৌথ বাহিনী। তার ‘বদলা’ নিতেই রাতারাতি রেললাইনে নাশকতার ছক কষা হয় বলে পুলিশের অনুমান। এক পুলিশকর্তা বলেন, “মানিকপাড়া মাওবাদীদের শক্ত ঘাটিঁ। সেখানে বিট হাউসে পুলিশের একটি শিবির আছে। আগেও বেশ কয়েক বার ওই শিবিরে জনগণের কমিটি হামলা চালায়। ওই এলাকায় কারা রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন, সেই খবর মাওবাদীদের কাছে ছিল। তাদেঁরই বেছে বেছে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী, যে খং (বড় হাতুড়ি) নিয়ে তাঁরা লাইনের কাজ করেন সেগুলিও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।” বন্দুকের মুখে ঠিকা-কর্মীরাই রেললাইনে নাশকতার ফাঁদ তৈরি করেন।

পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, রেলের ঠিকা কর্মীদরে নিয়ে মাওবাদীরা আখড়াশোল থেকে একটি পিক-আপ ভ্যানে চেপে পাকা রাস্তা দিয়ে সরডিহা পৌঁছয়। সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার মোরাম রাস্তা ধরে রাত ১২টা নাগাদ রাজাবাধেঁ আসে। রাজাবাধেঁ পৌছেঁ পিক-আপ ভ্যানটিকে ছেড়ে দেয় মাওবাদীরা। সেটি গুপ্তমণি হয়ে সাঁকরাইল যায়। সেখান থেকে বালিভাসা হয়ে মানিকপাড়া ফিরে আসে। ওই পিক-আপ ভ্যানটির নম্বর পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মাওবাদীরা রাজাবাধেঁ আসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখান দিয়ে হাওড়া-পোরবন্দর এক্সপ্রেস পেরোয়। আরও ১৫ মিনিট পরে যায় হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেস। তারও পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। পুলিশের অনুমান, রাত ১২টায় রাজাবাধেঁ পৌঁছলেও মাওবাদীরা রেললাইনের নাশকতার কাজ শুরু করে হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেস যাওয়ার পরেই। তার কারণ ওই ট্রেনের সঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী আসার ফাঁক ছিল অনেকটা। সেই সুযোগই নেয় মাওবাদীরা। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই লাইন দিয়ে যাতায়াতকারী ট্রেনের সময়সূচি মাওবাদীদের মুখস্থ।” প্রাথমিক তদন্তের পরে সিআইডি নিশ্চিত, রেললাইনে ৫০ মিটার জুড়ে প্যাোল ক্লিপ খোলার ফলেই বেলাইন হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। এবং ওই কাজ এখন মাওবাদীদের কাছে ‘জলভাত’ বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। পুলিশি রিপোর্ট বলছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম স্টেশনের অদূরে ঝাড়াগেড়িয়ায় প্যাোল ক্লিপ খুলে ৪০০ মিটার রেললাইন স্লিপার থেকে আলাদা করে দেয় মাওবাদীরা।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে রেল লাইনে কোনও বিস্ফোরণ মাওবাদীরা ঘটায়নি। কিন্তু ট্রেনচালক তাঁর এইআইআরে চাকার নীচে বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ডিজি-র বক্তব্য, “ছোটখাটো বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে সেটা নানা কারণে হতে পারে। কিন্তু বড় মাপের বিস্ফোরণ হলে তার যে পরিমাণ দৃশ্যমানতা থাকে, সরডিহায় তা দেখা যায়নি। এ কথা তো ঠিক, ছোট মাপের বিস্ফোরণে ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে না।”

নিহত ১৪৩
আহত ১৫০
শনাক্ত হয়েছে ৫৬ জন
ময়নাতদন্ত হয়েছে ৯৩ জনের
নিহতদের ছবি দেখা যাবে এই ওয়েবসাইটে:
www.cidwestbengal.gov.in

লাইনচ্যুত হয়ে ডাউন লাইনে এসে পড়া আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মেরেছিল যে মালগাড়িটি, তার চালক নির্ভয় কুমার শুক্রবার জানিয়েছিলেন, প্যান্ট-শার্ট পরা জনা সাতেক লোক দুর্ঘটনার পরে রেললাইনের পাশে দাড়িঁয়েছিল। তাদের হাতে বড় টর্চ ছিল। বাংলায় কথা বলছিল। নিজেদের মধ্যে কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল তারা। পুলিশের মতে, ওই জনা সাতেক লোকই নাশকতার ছক কষা মাওবাদী। এদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে খুব শীঘ্রই তদন্তকারী অফিসারেরা নির্ভয় কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, ওই রেললাইনের দেখভালকারী ১২ জন লাইনম্যানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোরেই রাজবাধেঁর ঘটনাস্থল থেকে জনগণের কমিটির নামাঙ্কিত একটি হাতে লেখা পোস্টার পেয়েছিল পুলিশ। কমিটির নেতাদের মধ্যে মোবাইলে কথোপকথনে আড়ি পেতেও যে তথ্য মিলেছে, তাতে দুর্ঘটনার পিছনে তাদের হাত থাকা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বলে দাবি রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, পুলিশ জেনেছে, বাপি মাহাতো নামে রাজাবাধেঁর এক কমিটি নেতা বৃহস্পতিবার রাতেই জনগণের কমিটির নেতা অসিত মাহাতোকে ফোন করে রেললাইনে ‘সর্বনাশ’-এর খবর দিয়েছিলেন। সেই তথ্য ধরেই নাশকতায় জড়িত কমিটির নেতা-কর্মীদরে খোজেঁ জোরদার তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকেদের তেমন ভাবে না আসাকেও মাওবাদীদের জড়িত থাকার বড় প্রমাণ হিসেবে দেখছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে কোনও দুর্ঘটনা হলে সবার আগে উদ্ধারকাজে হাত লাগান এলাকার মানুষই। কিন্তু সরডিহাতে তাদেঁর অনেকেই মাওবাদীদের প্রতি ভয়ে বা ভক্তিতে দুর্ঘটনাস্থলের ধারে কাছে যাননি।

কিন্তু মাওবাদীরা নিজেরা তো এই নাশকতার দায় অস্বীকার করেছে! ডিজি বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীকে মেরে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারলে তার দায় স্বীকার করে নেয় মাওবাদীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে তার দায় নেয় না।”

তবে সরডিহার ঘটনার পিছনে তাদেঁর কোনও হাত নেই বলে এ দিন ফের দাবি করেছেন অসিত মাহাতো। কমিটির পোস্টার উদ্ধার হওয়ার পর শুক্রবার সকালেই সংগঠনের এই প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সমস্ত ঘটনা শোনার পরে তাঁর মন্তব্য ছিল, “খোঁজ নিয়ে জানাব।” এর পরে অসিতবাবুর ফোন সারা দিন বন্ধই ছিল। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “কমিটি নেতার এমন মন্তব্য খুবই অস্বাভাবিক। জঙ্গলমহলের কোথায় কী হচ্ছে, কমিটির নেতারা তার খুটিঁনাটি জানেন।” শুক্রবার সন্ধ্যার মুখে ফের ফোনে যোগাযাগ করা যায় অসিতবাবুর সঙ্গে। প্রথমটায় অস্বস্তি জড়ানো গলায় ‘আন্তরিক ভাবে দুঃখিত’ বলে মন্তব্য করলেও পর মুহূর্তে দুর্ঘটনার সমস্ত দায় সিপিএমের উপরে চাপিয়ে দেন তিনি।

রেল নাশকতায় সি পি এমেরই হাত, ইঙ্গিত মমতার
সি বি আই তদন্তের দাবি মানতে রাজি কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পিছনে সি পি এমের হাত আছে বলে অভিযোগ করলেন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সি পি এমের নাম না করলেও তিনি প্রশ্ন তোলেন, একটি রাজনৈতিক দল ঘটনার পর এত তাড়াতাড়ি মাঠে নেমে পড়ল কী করে? তাদের পোস্টার, ব্যানার রাতারাতি এল কোথা থেকে? যখন স্টিফেন কোর্টে আগুন জ্বলেছে কিংবা উলুবেড়িয়ায় বাস দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন তো এদের দেখা যায়নি।

মমতার অভিযোগ, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের এতজন নিরীহ যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। পুরভোটের মুখে আমাকে জনসমক্ষে হেয় করতে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নেওয়া হল। আমি চাই, এই নাশকতার পূর্ণ তদন্ত করুক সি বি আই। সেই তদন্তে দোষীদের খুজেঁ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। রেলমন্ত্রীর দাবি, সি বি আই তদন্তের ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক করতে চলেছে। মমতার বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রেললাইনে কোনও ফিশপ্লেট খোলা হয়নি। আসলে ওখানে লাইনে ফিশপ্লেটই নেই। এটা লং ওয়েল্ডেড রেল ট্র্যাক। আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস যাওয়ার আগে পাইলট ইঞ্জিন চালানো হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাও উড়িয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পাইলট ইঞ্জিন ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার পর একটি মালগাড়ি সহ তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেন গিয়েছিল। জ্ঞানেশ্বরী যাওয়ার কয়েক মিনিট আগেই মালগাড়িটি পাস করে। বোমা বিস্ফোরণ যে হয়েছিল, সেটা জ্ঞানেশ্বরীর চালক বি কে দাস ঝাড়গ্রাম জি আর পি থানায় দায়ের করা এফ আই আরে উল্লেখ করেছেন। যাত্রীরাও আমাকে সেই কথা জানিয়েছেন।

মমতার অভিযোগ, একেবারে ছক সাজিয়ে এই নাশকতা ঘটানো হয়েছে। এটা একটা জঘন্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। তবে তদন্তে সব ধরা পড়ে যাবে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের দু’জন মন্ত্রী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বাদাম খেতে বসে গেলেন। তাঁদের লোকজনের খাবার এবং জল চলে এল। অথচ, ওখানে আমরা পানীয় জল পাইনি।

সি পি এমের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর আরও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ অন্য মন্ত্রীরা শোকের নাটক করছেন। কিন্তু স্টিফেন কোর্টে কিংবা উলুবেড়িয়ায় ঘটনার সময় তাঁদের দেখা যায়নি। তাছাড়া পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে রাতারাতি প্রচারের আয়োজন কী করে সি পি এম করল? আমি এলাকা থেকে অনেক তথ্য নিয়ে এসেছি। সি বি আই তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। এলাকাটা তো সি পি এমের হার্মদাদের দখলে।

পুরভোটে এই নাশকতার জবাব দিতে তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে রায় দেওয়ার আবেদন জানান। মমতা বলেন, শুধু এই ঘটনাই নয়, আমি রেলমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এরকম চক্রান্ত চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের কাছেও এভাবে লাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। অথচ, ওখানে তো আর মাওবাদী নেই।

মাওবাদীদের হটিয়ে আশপাশের কয়েকটি
গ্রামের দখল নিয়েছিল সি পি এম

দেবাঞ্জন দাস P সরডিহা (পশ্চিম মেদিনীপুর)

সরডিহা ও খেমাশুলি েস্টশনের মাঝে গ্যাসকাটার দিয়েই লাইনের দু’জায়গায় বেশ কিছুটা অশ কেটে নেওয়া হয়েছিল বলে তদেন্ত নেমে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। আপ লাইনের দুটি অশ কাটতে এব েপেণ্ড্রাল ক্লিপ খুলতে দুষ্কৃতীরা প্রায় ৪০ মিনিট সময় নিয়েছিল। নাশকতার কাজে যুক্ত ওই দলটিতে ২৫ থেকে ৩০ জন ছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। নানা বিষয়ের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখে নাশকতার এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীরাই যুক্ত, এখনই এমন কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধোন্ত আসতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। তেমনই, অন্য কেউ এই নাশকতার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের হটিয়ে বুধবারই সরডিহার ওই অশের দখল নিয়েছিল সি পি এম। লালগড় থেকে বিতাড়িত এক সি পি এম নেতার নেৃতেত্ব বুরজুটি, পাথরি, কোল্লা, কাঁকরাশোল এব গাইমারার মতো গ্রামগুলিতে বিরোধী দলের সমর্থক বলে পরিচিত বেশ কয়েকজনের বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। মাওবাদীদের ঠেকাতে বুরজুটি গ্রামে সশস্ত্র হার্মদাদের ক্যাম্প করে রাখা হয়েছে বলে খবর এসেছে গোয়েন্দাদের কাছেও। তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন, ওই এলাকায় ২৬ মে রাতে লালপার্টির বাছাই কর্মীদরে বৈঠকের এজেন্ডা নিয়েও।

সি পি এমের এই পাহারাদারদের উপিস্থতির মাঝে মাওবাদীরা কী ভাবে এতবড় ঘটনা ঘটাতে পারল, তাও খুজেঁ দেখা হচ্ছে। তাছাড়াও, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরিডহা থেকে সামান্য দূরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ের পর পালিয়ে যায় একদল মাওবাদী। যৌথ বাহিনী সেখানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সঘর্ষের পর সি আর পি থাকা সেত্ত্বও সিশ্লষ্ট এলাকায় মাওবাদীরা ফের বীরত্ব ফলাতে এসেছে, এমন দৃষ্টন্ত জঙ্গলমহলে নেই। তদেন্ত এই ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে পুলিশকে।

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার তদেন্ত নেমে গোয়েন্দারা হদিশ পেয়েছেন কয়েকজন গ্যাম্যানের। এঁরাই বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মতো সরডিহাখেমাশুলির মাঝের অশের লাইন পরীক্ষা করেছিলেন। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, গ্যাম্যানদের এই দলটিকে ভয় দেখিয়েই আপ ও ডাউন লাইনে প্রায় ২০০ মিটার অশের েপেণ্ড্রাল ক্লিপ খোলানো হয়েছিল। এই গ্যাম্যানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নাশকতার সঙ্গে যুক্তদের ব্যাপারে বাড়তি খবরাখবর মিলবে বলেও আশা করছে পুলিশ।

গোয়েন্দারা বলছেন, সরডিহা ও খেমাশুলির মাঝের ওই আপ লাইন দিয়ে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের আগে রাত পৌনে একটা নাগাদ গিয়েছিল রাঁচিহাতিয়া এক্সপ্রেস। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১টা ২৫ মিনিট নাগাদ। অর্থৎা দুটি েট্রনের মাঝের প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে নাশকতার ব্লু প্রিণ্ট তৈরি করা হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩৪/১১ ও ১৩৪/১২ রেল পেোস্টর মাঝে আপ লাইনের যে দুটি অশে লাইন কাটা হয়েছিল, তা গ্যাস কাটার ছাড়া কোনওভাবেই ওই সময়ের মধ্যে কাটা সম্ভব নয়। পূর্ব প্রস্তুতি এব আশপাশের গ্রামের লোকজনের সাহায্য ছাড়া এ কাজ অসম্ভব।

আরও একটি বিষয়ও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। তা হল, এর আগে যতবারই মাওবাদী এব সিুধুকানহু গণমিলিশিয়া কোনও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা দায় স্বীকার করে ঘটনাস্থলে পোস্টারও সেটেঁ দিয়েছে। সেই পোস্টারে লাল কালিতে নিতান্তই কাঁচা হাতে ভুল বানানে বয়ানগুলি লেখা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম নীল কালিতে বেশ পাকা হাতের লেখায় জনসাধারণের কমিটির নামে নাশকতার দায় স্বীকার করা পোক্রার মিলেছে সরডিহার দুর্ঘটনাক্ললে। গোয়েন্দারা বলছেন, তড়িঘড়ি নয়, ধীরেসুক্লে চিন্দাভাবনা করে লেখা হয়েছে দায় িীকারের ওই পোক্রার। এই বিষয়টিও তদন্দের কাজে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

Hানেশ্বরীতে নাশকতায়
মাওবাদীরা কাজে লাগিয়েছে রেলকর্মীদরে, ইঙ্গিত ডি জি’র

নিজি প্রতিনিধি, কলকাতা: শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনা মাওবাদীদের কাজ। ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই রাজ্য পুলিশের ডি জি ভূপিন্দর সিং শনিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা নিশ্চিত, এই কাজ অবশ্যই মাওবাদীরা করেছে। সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষও বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে, মাওবাদীরাই যুক্ত।

ধু তাই নয়, মাওবাদীরা এই কাজের জন্য রেলের লোকজনকে কাজে লাগিয়েছে ধরে নিয়ে সি আই ডি তদন্দ চালাচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ডি জি। তিনি বলেন, রেলের গ্যাংম্যানরা সাধারণত এলাকার লোক হন। অনেক জায়গাতেই ঠিকাদাররা তাদের নিয়োগ করে। তাদের উপর মাওবাদীদের প্রভাব থাকা অসম্ভব নয়। ডি জি জানিয়েছেন, রেলের ওই সব লোকদের সি আই ডি জেরা করছে।

এদিকে, নাশকতার কারণ সর্কে ক্রবার বিেত্মারণের সাবনা একপ্রকার উড়িয়ে দিয়েছিলেন ডি জি। কিচ্চ এদিন তিনি বলেন, বিেত্মারণ হয়ে থাকলেও তা বড়মাপের ছিল না এবঁি তা ৌঁন বেলাইন হওয়ার কারণ নয়। তাঁর বক্তব্য, জ্ঞানেশ্বরীর চালক যে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তা বাজির আওয়াজও হতে পারে। কোনও বিশেষ বার্তা হিসাবে মাওবাদীরা বাজি ফাটিয়ে থাকতে পারে বলে ডি জি দাবি করেন।

ৗঁন বেলাইন হওয়ার কারণ কি? ডি জি বলেন, কঁিক্রিটের িন্মপারের উপর রেললাইন আটকে রাখার জন্য যে েপোল ব্যবহার করা হয় ঘটনাক্ললে আপ এবঁি ডাউন দুই লাইনেই তার বেশ কিছু খোলা ছিল। ফলে যে কোনও লাইনেই ওই ঘটনা ঘটতে পারত। ঘটনাচক্রে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস আগে আসায় সেটি বেলাইন হয়। ইঞ্জিনটি মোটামুটি লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশ কয়েকটি বগি পাশের লাইনে উঠে যায়। সেগুলিতেই ধাক্কা মারে উলটো দিক থেকে আসা মালগাড়ি।

ক্রবার নিজে ঘটনাক্ললে গিয়েছিলেন ডি জি। সেখানেই তিনি বিেত্মারণের সাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ছিল বিেত্মারণ হলে মাটিতে অনেকটা গর্ত হওয়ার কথা। কিচ্চ ঘটনাক্ললে তা দেখা যায়নি।

এদিন মহাকরণে তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই দাবি করেন, মাওবাদীরা ছাড়া আর কেউ এই কাজ করেনি। তদন্দ শেষ হওয়ার আগেই তিনি এতটা জোর দিয়ে কী করে এ কথা বলছেন? ডি জি’র বক্তব্য, প্রাথমিক তদেন্দই কয়েকজনকে চিিত করা গিয়েছে যারা এই কাজ করেছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে মাওবাদীরা স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম থেকে যুবকদের তুলে নিয়ে যায়। ওই যুবকদেরই রেলের পেণ্ড্রোল ক্লিপ খোলার কাজে লাগানো হয়েছিল বলে ডি জি’র দাবি। তিনি বলেন, ওই এলাকায় মাওবাদীরা ধারাবাহিকভাবে নাশকতামূলক কাজ করে চলেছে।

নাম না করে কার্যত সি পি এমকেই
দায়ী করলেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পিছনে নাম না করে কার্যত সি পি এমকেই দায়ী করলেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাবাদিক বৈঠক করেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সেখানে শুভাপ্রসন্ন, সুনন্দ সান্যাল, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, শাঁওলি মিত্র, প্রসূন ভৌমিক, যোগেন চৌধুরি, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মূল বক্তব্য, পুরভোটের মাত্র দু’দিন আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। মাওবাদীরা এব পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি দাবি করেছে, এই কাজ তাদের নয়। তাহলে নিশ্চয়ই এই ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভবান হবে, তারাই উেদ্দশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সেটা যে কার্যত সি পি এম, তাও আকারইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন বুদ্ধিজীবীরা। তবে এরপরই সাবাদিকরা এনিয়ে পালটা প্রশ্ন করতে চাইলে বুদ্ধিজীবীরা উত্তর দিতে চাননি। এরপরই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ময়দান থানার পুলিশও প্রেস ক্লাবে যায়। পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের অন্য একটি ফোরাম শিল্পীসাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চও এই ঘটনার নিন্দা করে এর পিছনে অন্য কোনও ‘শক্তি’র হাত থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে।

এদিকে বুদ্ধিজীবীরা কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সাবাদিক বৈঠক না করলেও রাজ্য নির্বচান কমিশনের কাছে এনিয়ে অভিযোগ যায়। কমিনের সচিব এস এন রায়চৌধুরি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২৮ মে বিকাল ৩টের পর প্রকাশ্যে কেউ নির্বচানী প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু এই সাবাদিক বৈঠক চলাকালীন সি পি এমের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসে যে ওখানে নির্বচানী বিধি ভঙ্গ হচ্ছে। এরপর আমরা প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলি। পুলিশকে বলা হয়েছে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমকে এনিয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ময়দান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বচান কমিশন কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। সাবাদিক বৈঠক চলাকালীন যেভাবে পুলিশ প্রেস ক্লাবে ঢুকে পড়ে এব নির্বচান কমিশন যেভাবে এনিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, তার তীব্র নিন্দা করেছে প্রেস ক্লাব।

ঠিকাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে মাওবাদী-দুষ্কর্ম





অাজকালের প্রতিবেদন: কারা সরডিহায় নাশকতা ঘটাল সেই দল ও তার নেতাকে চিহ্নিত করা গেছে বলে দাবি করল রাজ্য পুলিস। সরডিহাতে রেল দুর্ঘটানার তদন্তে প্রাথমিকভবে কিছু সূত্র পেয়েছে সি অাই ডি-ও। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘটনার দিন সকালে একটি টাটা সুমোকে ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। রাজবাঁধ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের খালশিউলি গ্রাম। অার ৬ কিমি। দূরে বারমোল গ্রাম। মাওবাদী প্রভাবিত বলে ওই গ্রাম দুটি পরিচিত। সম্প্রতি সেখানে মাওবাদীরা বৈঠক করে। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা অারও জানতে পেরেছেন, রেল লাইনে কাজ করেন এমন বেশ কিছু ঠিকাকর্মী অাশপাশের কিছু গ্রামে থাকেন। উমাকান্ত ও বাপি নামে দুই মাওবাদী তাঁদের ভয় দেখিয়ে তুলে এনে পেনড্রোল খোলায়। দক্ষ কর্মী ছাড়া পেনড্রোল খোলা যায় না। মাওবাদীদের এই কাজে সহযোগিতা করেছিল জনসাধারণের কমিটি। ম্যানুয়াল সিগনাল দেখিয়ে ছিল গণ মিলিশিয়ার কমিটির কয়েকজন। এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। রেল জি অার পি-তে এফ অাই অারে মাওবাদীরা নাশকতা ঘটিয়েছে, এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করেনি। এফ অাই অারে নাশকতার ঘটনার কথা বলা হলেও, সন্দেহ কারও দিকেই নেই। পুলিস বলছে, সেদিন রাত ১১টা ৪০ মিনিটে অাপ লাইন দিয়ে একটি মালগাড়ি যায়। তার পর ১২টা ৪০ মিনিটে রাঁচি-হাতিয়া এ‘প্রেস যায়। তার পর রাত ১টা ১০ নাগাদ জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের সরডিহা স্টেশন পার হয়ে যাওয়ার কথা। রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুক্রবার সকালে জানিয়ে ছিলেন, জ্ঞানেশ্বরী যাওয়ার অাগে পাইলট ইঞ্জিন গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ৫০ মিটার লম্বা অাপ ও ডাউন লাইনের ‘পেনড্রোল ক্লিপ’ খোলা থাকলে পাইলট ইঞ্জিনের কোনও ক্ষতি হল না· রাঁচি-হাতিয়া এ‘প্রেস যাওয়ার অাধঘণ্টা পরেই জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেস পার হয়েছিল। তখনই দুর্ঘটনা। অাদৌ পাইলট ইঞ্জিন সেদিন কি ওই পথে গিয়েছিল· মাওবাদীরা অাধঘণ্টার মধ্যে দেড় মিটার লম্বা লোহার রেল ট্র্যাক কেটে নেয়। একশোর কাছাকাছি পেনড্রোল ক্লিপ খুলে নেয়। সি অাই ডি-র এক কর্তার বক্তব্য, মাওবাদীদের দলে পেনড্রোল ক্লিপ তাড়াতাড়ি খুলে নেওয়ার জন্য কোনও প্রশিিক্ষত লোক ছিল। রেল ট্র্যাক কাটতে ব্যবহার করা হয়েছিল বৈদ্যুতিন করাত। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শনিবার মহাকরণে ডিজি ভূপিন্দর সিং সাংবাদিকদের বলেন, রেল দুর্ঘটনা কীভাবে হয়েছে, কারা করেছে, এই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য অামাদের কাছে এসেছে। পেনড্রোল ক্লিপ শব্দের কোডশব্দ ব্যবহার করে তারা বলেছে ‘জিলেপি’। শুধু তাই নয়, যে দু’জনকে অাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা মাওবাদী অ্যাকশন স্কোয়াডে ঢুকেছে বলে খবর এসেছে। সাদা গাড়িতে কয়েকজন এসেছিল, গ্রামের কিছু ছেলেকে তারা রেল লাইনে পেনড্রোল খোলার কাজে লাগিয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা নেওয়া হয়েছে। একটা সামান্য শব্দ শোনা গেছে। এরাই ১২ অ’াবর রাজধানী এ‘প্রেস অাটকেছিল। রেলের লাইনের ভাঙা অংশটা দেখা হচেছ। কী সময়ে মালগাড়ি ছাড়া হয়েছিল, সেদিন যে ১২ জন লাইনসম্যান ছিল, তাদের বিষয়টি দেখা হচেছ। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহলে ১৫০ নিরীহ গরিব মানুষকে খুন করেছে মাওবাদীরা।


এফ অাই অাব়এ মাওবাদী নেই¯



সব্যসাচী সরকার ও সোমনাথ নন্দী ☞ সরডিহা




২৯ মে– জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেস থেকে এখনও পর্যন্ত ১৪১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাতে সংবাদ সংস্থা পি টি অাই সূত্রে খবর। শুক্রবার রাতভর দেহ উদ্ধার অভিযান চলেছে, শনিবারও চলল। উদ্ধারকারীরা এখনও অাশায় অাছেন যদি কেউ জীবিত থাকেন। এই রেল দুর্ঘটনার পেছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে বলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষ জানিয়েছেন। রাজ্য পুলিসের ডিজি ভূপিন্দর সিং জানান, ওই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গেছে। মাওবাদী ও জনসাধারণের কমিটি এই ঘটনায় যুক্ত। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। এদিকে মাওবাদীদের নাম উল্লেখ না করে ঝাড়গ্রাম জি অার পি-তে অভিযোগ দায়ের করেছে রেল। জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের চালক বি কে দাস এফ অাই অার করেছেন। পাশাপাশি, দুমড়ে যাওয়া রেল লাইন থেকে ধ্বংস হওয়া বগি সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলেছে। তবে, সে কাজে গতি কম। দুটি ক্রেন অাপ ও ডাউন লাইনে বসিয়ে কাজ চলছে। অানা হয়েছে নতুন রেল। পরিস্থিতি যা, খড়গপুর-ঝাড়গ্রাম লাইনে ট্রেন চলতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। ভয়ঙ্কর নাশকতার পর কংক্রিটের স্লিপার যেন বিস্কুটের মতো ভেঙে গেছে। শুক্রবার সারাদিনই চলেছে স্লিপার সরানোর কাজ। রেলের পদস্থ অাধিকারিকেরা এসেছেন। রাতভর উদ্ধার কাজের তদারকি করেছেন অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখার্জি। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্য থেকে অাত্মীয়রা পৌঁছচেছন সরডিহার অকুস্থলে। শনিবার সকাল থেকেই মৃতদেহের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শুক্রবার সন্ধেয় এস-৪ কামরা থেকে দু’জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। স্বজন হারানোর কান্নায় বাতাস ভারী সরডিহায়। উঠছে নানা অভিযোগ। উদ্ধার কাজে দেরি, কেন জীবিত বা মৃত জানা যাচেছ না, হেল্পলাইনে ফোন করে কেন উত্তর মিলছে না ইত্যাদি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিস। ঝাড়গ্রাম জি অার পি-তে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের কপি দেওয়া হয়েছে সি অাই ডি-কে।

রেল দপ্তরের ব্যাখ্যা

রেলের তরফে করা এফ অাই অারে মাওবাদী প্রসঙ্গ উল্লেখ না করার যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে দিক্ষণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অাধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার জানান, প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের চালক বি কে দাস তাঁর দেখা বিষয়ই এফ অাই অারে লিপিবদ্ধ করেছেন। ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কারা তা খোঁজার দায়িত্ব তদন্তকারী দল, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত সংস্থার। উদ্ধার, অাহতদের চিকিৎসা, মৃতদেহ হস্তান্তর বিষয়ে রেলের বিরুদ্ধে অাসা অভিযোগগুলোর উত্তরে তিনি জানান, দঃ পূঃ রেলের জি এম এবং অাধিকারিক-সহ হাজারের বেশি রেলকর্মী এই সব কাজে যুক্ত। তাদের তরফে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচেছ। অসুবিধের মধ্যেও বাতিল করা হয়নি মুম্বইগামী কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন।

উদ্ধারকাজে চরম অব্যবস্থা

শোকার্ত অাত্মীয়স্বজনদের প্রশ্ন একটাই, কোথায় গেলে জানতে পারব জীবিত না মৃত। মৃত হলে দেহ কোথায়। অভিযোগ, যে যে সংরিক্ষত কামরাগুলি দুর্ঘটনায় দুমড়ে গেছে, সেগুলির ‘রিজার্ভেশন চার্ট’ মিলিয়ে দেহ উদ্ধারে যথেষ্ট তৎপর নয় রেল। ভাঙা কামরার কাছে বহু মানুষ বারে বারে চলে অাসছেন বার্থ নম্বরে থাকা অাত্মীয়ের খোঁজে। একশোর বেশি মৃতদেহ উদ্ধার হলেও সমস্ত মৃতের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। অনেকেই চোখের জলে প্রশ্ন করছেন এই কামরাতেই তো ছিল¯ এক মহিলা অাকুল হয়ে কেঁদে চলেছেন। তাঁর স্বামী মৃত, অথচ দেহের সন্ধান তিনি পাচেছন না। বলছেন, ‘একবারও কী শেষ দেখা দেখতে পাব না’... এই প্রশ্নটিই ঘুরপাক খাচেছ অকুস্থল জুড়ে। গ্যাস কাটার দিয়ে বগি কেটে, অন্ধকার বগিতে টর্চ ফেলে দেহ খোঁজা হচেছ। হাসপাতালের চিত্র অারও শোকাবহ। অনেক দেহই অাঘাতে বিকৃত হয়ে গেছে। যাঁদের চিকিৎসা চলছে, তাঁরা কোন বগিতে ছিলেন– কখন উদ্ধার করে, কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, তার স্পষ্ট কোনও উত্তর রেলের কাছে পাচেছন না অাত্মীয়রা। যেমন অবস্থা হয়েছে যূথিকা অাটার। তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ অাটা মৃত। হাওড়ার বালটিকুরির বাসিন্দা। এস-৩ কামরায় ছিলেন। ভুসোয়াল যাচিছলেন। ৪ বছরের মেয়ে পৌলোমীকে নিয়ে। দুটি ক্রেন দিয়ে অতগুলি কামরা কবে সরানো যাবে, তার পর দেহ উদ্ধার হবে। রেলের উদাসীন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখার্জি বলেন, ওরা ওদের মতো কাজ করছে। সমন্বয় করে কাজ করছে না। মেডিক্যাল কলেজের একটা টিম রয়েছে। ওরা তাদের সঙ্গে কাজ না করে অালাদা ক্যাম্প খুলেছে। গোটা ব্যাপারটাই কোনওরকম তদারকি ছাড়াই চলছে। একটা সিস্টেমের যদি এই চেহারা হয়¯ ওরা তো রিজার্ভেশন লিস্টটাও এখনও দিয়ে উঠতে পারল না। শুক্রবার থেকে ঘটনাস্থলে রয়েছেন অসামরিক প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যা পরিস্থিতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ওই কোচ থেকে বাকি দেহ অার মিলবে কিনা সন্দেহ। হাত, পা, মাথা– বহু দেহেরই এমন চেপেট গেছে, যে উদ্ধার করাই সম্ভব নয়। এ যেন স্টিফেন কোর্টেরই এক পরিবর্তিত দৃশ্য। কোন যাত্রী কোথায় ছিলেন, তা যেমন অার অালাদা করা সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় বার্থ নম্বর খুঁজে পাওয়া। বহু দেহই প্রবল চাপে তালগোল পাকিয়ে গেছে। প্রবল ধাক্কার পরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়, তাতেও অনেকেই মারা গেছেন। ভেতরেও বিদ্যুৎস্পর্শে মৃত্যু ঘটেছে। ফরেনসিক দল নমুনা সংগ্রহ করেছে। যাঁদের দেহ শনাক্ত করা যাচেছ না, তাঁদের েক্ষত্রে ডি এন এ পরীক্ষা করা হবে। রবিবার ছুটির দিনে সেণ্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি খোলা রাখার জন্য বলেছে রাজ্য সরকার। দেহের দাবিদারদের রক্তের নমুনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ৩ কোটি টাকা

সরডিহায় রেল-দুর্ঘটনায় মৃতদের ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকার ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অাহতদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনতে জেলাশাসককে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করেছে সি অাই ডি. রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অসীম দাশগুপ্ত শনিবার মহাকরণে এ কথা জানান। রাজ্য সরকার নিহতদের মাথাপিছু ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অসীম দাশগুপ্ত এ বিষয়ে অালোচনা করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট জেলাশাসককে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে রেল- দুর্ঘটনার ব্যাপারে একটি মনিটরিং মিটিং করেন। বৈঠকে ছিলেন মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন, স্বরাষ্ট্র সচিব সমর ঘোষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় দপ্তরের সচিব মদনলাল মীনা, মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তা ডাঃ সোমেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং রাজ্যের অাই জি ছঅাইন-শৃঙ্খলাগ্গ সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। অর্থমন্ত্রী জানান, উদ্ধারের কাজ চলছে। সি অার পি এফ, রাজ্য পুলিস, কলকাতা পুলিস, রেলের কর্মী, এন ডি অার এস কাজ করছে। শুক্রবার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সি অার পি এফ এবং রাজ্য পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে দেয়। অাহতদের খড়গপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খড়গপুর রেল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এঁদের মধ্যে ১৪ জনকে কলকাতার এস এস কে এম এবং এন অার এস হাসপাতালে নিয়ে অাসা হয়েছে। ৫ জনকে অার জি কর়ে নিয়ে অাসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে রাজ্য সরকার। ওষুধ কেনার জন্য জেলাশাসককে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৭২ জনের ময়নাতদন্তের কাজ চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘটনার পেছনে মাওবাদীদের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই রকম ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অামরা ক্ষুদ্র রাজনীতি করি না। যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোই প্রথম কাজ। যাঁরা অাহত হয়েছেন তাঁরা যাতে ভালভাবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই দিকেই অামরা বিশেষ গুরুত্ব দিচিছ। রাজ্যের মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন বলেন, যাত্রী সুরক্ষার ব্যাপারে অামরা তো রেলের সঙ্গে ঘন ঘন মিটিং করেছি। সব ট্রেনে পাইলটিংয়ের কথাও বলেছি।


বিস্ফোরণই, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র অাছে: মমতা







অাজকালের প্রতিবেদন: নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি¯ এমনই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধেও। শনিবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে বসে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। যেখানে বসে রেলমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য পেশ করছিলেন, তার পেছনেই তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় প্রতীক জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, খতিয়ে দেখা হচেছ বিষয়টি। রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন সি পি এম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। চিঠিতে বিমান বসু বলেছেন, রেলের নাশকতার ঘটনা নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় রেলমন্ত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুর নির্বাচনের বিষয়টিকে যুক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি যেখানে বসে ছিলেন তার পেছনে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্র উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কর্তৃক নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন বিমানবাবু। চিঠি দেওয়ার অাগে সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন ফোনে নির্বাচন কমিশনকে সি পি এমের পক্ষ থেকে মৌখিক অভিযোগও জানানো হয়। সাংবাদিকদের কাছে এদিন মমতা বলেন, বিস্ফোরণের জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার কারণ জ্ঞানেশ্বরী এ‘প্রেসের চালক এফ অাই অারে বলেছেন বিস্ফোরণের জন্যই এই দুর্ঘটনা হয়েছে। মাওবাদী তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ঘটনার পেছনে কারা যুক্ত তার তদন্ত তো পুলিসের করা উচিত। ড্রাইভার কী করে বলবেন মাওবাদীরা করেছে না কে করেছে। চালকের পেক্ষ তা বলা সম্ভব নয়। তিনি কী করে জানবেন· তিনি তো ট্রেন চালাচিছলেন। মমতা বলেন, ফিশপ্লেট খোলা ছিল না। গ্যাস কাটার দিয়েও রেললাইন কাটা যায় না। এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। সি বি অাই তদন্ত চেয়েছি এই কারণেই। প্রকৃত সত্য বের হবে বলেই। মমতার অভিযোগ, ঘটনার পর যে মন্ত্রীদের কখনও চোখে দেখা যায় না সেই ৪।৫ জন মন্ত্রী হঠাৎ করে ঘটনাস্থলে চলে গেলেন। ভোটের দু’দিন অাগে জঘন্য চক্রান্ত করা হয়েছে। অামাকে প্রচার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ক্যালকুলেশন করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সি বি অাই তদন্ত হলে সব বেরিয়ে অাসবে। ঘটনার পরেই শোক মিছিল বেরিয়ে পড়ল। বোঝা যাচেছ কী হয়েছে। অামি তো শুনেছি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অামি যে সি বি অাই তদন্ত চেয়েছি তাতে সহমত হয়েছেন। মমতা বলেন, স্টিফেন কোর্টে যখন এত লোক মারা গেলেন তখন তো শোকমিছিল বের হল না। ঘৃণ্য অপরাধ করেও শোকমিছিল বের করা হয়। যাত্রী তালিকা তো টাঙানোই থাকে। না দেওয়ার তো কিছু নেই। ওদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে সকাল-সকাল প্রত্যেককে ভোট দেওয়ার জন্য অাবেদন জানিয়েছেন তিনি। মমতার বক্তব্য, কোনও গুজবে কান দেবেন না। ঘটনার জন্য তিনি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সি পি এম-কেই দায়ী করেছেন। এদিন কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মানস ভুইয়াঁ প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে বসে বলেন, রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বড্ডবেশি রাজনীতি হচেছ। রাজনীতি বন্ধ করার অাবেদন জানান তিনি। মানসবাবু মনে করেন এই সময় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোটাই কর্তব্য। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঘটনার উচচপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ও রেলের মধ্যে কোনও সম্বন্বয় যে নেই এই ঘটনাই তার প্রমাণ। এই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি যাঁরা করছেন তাঁদের ধিক্কার জানাই।

ব়েল দুর্ঘটনা নিয়ে সুশীল সমাজেব় ভূমিকা সমর্থন কব়েন·





সৌমিত্র দাস: কাঁথি, ২৯ মে– ঝাড়গ্রামের সরডিহার কায়দায় এবার দীঘা-তমলুক রেলপথে নাশকতার চেষ্টা। কাঁথি রেল স্টেশনের অনতিদূরে কৃষ্ণচক বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের পাশে গিমাগেড়িয়ায় দীঘাগামী রেলপথে ৫৮-৫৯ কিমির মধ্যে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে প্রায় শতাধিক ‘পেনড্রোল ক্লিপ’ খুলে দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার ভোরে দীঘা-সাঁতরাগাছি লোকাল ট্রেনটি কপালজোরে অকুস্থল পেরিয়ে যায়। রেল অাধিকারিকদের মতে, দুষ্কৃতীরা বিিক্ষপ্তভাবে পেনড্রোল ক্লিপ খোলায় ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। রেলপথের দু’পাশে লোহার রেলপাতের সঙ্গে সিমেণ্টের স্লিপারগুলিকে অাটকে রাখার জন্য এই পেনড্রোল ক্লিপ লাগানো থাকে। দুষ্কৃতীরা নিছক চুরির জন্য যে এগুলি খুলে ফেলেনি, তার বড় প্রমাণ পেনড্রোল ক্লিপ রেললাইনের পাশেই পড়ে ছিল। শুক্রবার ভোরে দীঘা-সাঁতরাগাছি ট্রেন চলে যাওয়ার পর ঘটনাটি গ্রামবাসীদের নজরে অাসে। গ্রামবাসীরাই কাঁথি থানায় জানান। খবর পেয়ে রেলের অাধিকারিকরা ঘটনাস্থলে অাসেন। দীঘা রেল পুলিসের ভারপ্রাপ্ত ওসি গণেশচন্দ্র করণ কাঁথি থানায় এফ অাই অার দায়ের করেছেন। পুলিস ও রেল দপ্তরের মতে, এেক্ষত্রেও একই নাশকতার ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। শনিবার রেল দপ্তর খুলে ফেলা ক্লিপগুলি লাগানোর ব্যবস্থা করে। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অপরিচিত লোকজনকে রেলপথের পাশে ঘুরতে দেখা যায়। ওসি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।