Saturday, May 9, 2009

এ বারের নির্বাচনে ‘পরিবর্তনে’র একটা জোরদার হাওয়া যে উঠেছে, তাতে সন্দেহ নেই। রাজ্যের সর্ব স্তরের মানুষ ‘পরিবর্তন’ চাইছেন। পরিবর্তনের পর কী হবে, কে আসবে, ভালো হবে, না মন্দ–এ সব এ রাজ্যের মানুষের মাথাতেই নেই। যে কোনও মূল্যে তঁারা চাইছেন, সি পি এমের দম্ভী, মানবতাবোধহীন, উদ্ধত সরকারের পতন। বছরের পর বছর, দিনের পর দিন একটানা অত্যাচার, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা সহ্য করতে করতে রাজ্যের বামবিরোধী মানুষ আজ মরিয়া।

সি পি এমসন্ত্রাসের বদ্ধ কারায় গুমরে মরতে মরতে গ্রামের গরিব সাধারণ মানুষও আজ ক্ষিপ্ত, বীতশ্রদ্ধ এই বাম সরকারের উপর। সকলেই এই হুমকি হামলাসন্ত্রাসের পরিবেশ থেকে মুক্তি চাইছেন। এই মুক্তিপথের নামই তঁারা দিয়েছেন–‘পরিবর্তন’।

আজ স্মৃতি হাতড়ে দেখছি, যেন এমনটাই হয়েছিল সাতাত্তর সালে। এমনি একটা ‘পরিবর্তনে’র হাওয়া উঠেছিল সে বারও। সত্তরের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা, দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে কারণেঅকারণে জেলবন্দি করা, আর এই রাজ্যে সিদ্ধার্থ রায়ের ৈস্বরাচারী শাসন, তঁার দলের গুণ্ডাবাহিনীর সন্ত্রাস, খুনোখুনি, বরুণ সেনগুপ্ত, গৌরকিশোর ঘোষের মতো বিখ্যাত সাবাদিকদের জেলে ঢোকানো ইত্যাদি ঘটনায় রাজ্যজুড়ে এক অসহনীয় পরিবেশের সৃিষ্ট হয়েছিল। রাজ্যের সাধারণ মানুষ অসহায় আতঙ্কে দিশেহারা। সবাই ভাবছিলেন, কবে এই কালরাত্রি শেষ হবে! সে দিন কিন্তু এই সি পি এমের তখনকার নেতা এবকমর্রীাই সাধারণ মানুষের পাশে দঁাড়িয়ে তঁাদের সাহস জুগিয়েছিলেন, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।

মানুষ সে দিন মার্কসবাদী নেতা ও কমর্ীদের সৎ, সহনশীল, আদর্শবাদী ভূমিকা দেখে তঁাদের বিশ্বাস করেছিলেন, আস্থা রেখেছিলেন তঁাদের ওপর। সেই আস্থা ও বিশ্বাসে ভর করেই সাতাত্তরের নির্বাচনে এ রাজ্যের মানুষ নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিলেন ভোট বােক্স। পরিবর্তনের ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল সে দিনের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিদ্ধার্থ রায় এব তঁার বাহিনী। পুলিশ দিয়ে, হুমকি আর সন্ত্রাস চালিয়ে, মানুষকে যে বেশি দিন শাসনে রাখা যায় না–সিদ্ধার্থ রায়ের ইতিহাস সেটা প্রমাণ করেছিল।

কিন্তু, আজকের মার্কসবাদীরা তা থেকে কোনও শিক্ষাই নেননি। বর, বিগত কয়েক বছরের ঘটনাবলী দেখে মনে হচ্ছে–তঁারা ওই ইতিহাসকে ভুল প্রমাণ করতেই বেশি আগ্রহী। না হলে, সর্ব ক্ষেত্রে কেবল বাহুবল প্রয়োগ করে, হুমকিধমকি দিয়ে ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার এমন নির্মম খেলায় কেউ মাতে? সাধারণ মানুষের সামান্য জমিবাড়ির অধিকার হরণ করতে এমন আগ্রাসী ভূমিকা নেয়? জনতার মহাশক্তিকে কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অপমান করে? গ্রামের একটি অতি সাধারণ মেয়ের মর্মািন্তক মৃত্যুর কাহিনি চূড়ান্ত বিকৃত করে সিডি বানায়, আর, সকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে তা ব্যবহার করে? এই জন্যই তো যে মার্কসবাদীরা সাতাত্তরে সাধারণ মানুষের কাছে ‘পরিত্রাতা’ ছিলেন, আজ তঁাদের হাত থেকেই পরিত্রাণ পেতে মানুষ ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিয়েছেন!

দেবেন নাই বা কেন?

গত তিন দশকের বেশি একচ্ছত্র শাসন ক্ষমতায় থেকে সি পি এম তো সিদ্ধার্থ রায়দের চেয়ে কম কিছু করেনি! ওঁদের জমানায় রাজ্যজুড়ে হয় তো জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। কিন্তু, আমরা কি বলতে পারি, এ রাজ্যের গ্রামমফস্‌সলের মানুষ তার চেয়ে খুব ভালো অবস্থায় আছেন? গত তিন দশকে সি পি এমের নেতা আর হার্মাদ ক্যাডার বাহিনীর ফতোয়া না মানায় গ্রাম, মফস্‌সলের কত সাধারণ গরিব মানুষ একঘরে হয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, খুন হয়েছেন, তঁাদের ন্যায্য সম্পত্তি, জমিজমা থেকে বিঞ্চত হয়েছেন, তছনছ হয়ে গিয়েছে কত সসার–তার হিসাব আছে? শুধু গ্রামে কেন, শহরেও খুঁজলে এমন ভূরি ভূরি নজির মিলবে।

কেন এই শািস্ত? কারণ, এঁরা সি পি এমের কথা শোনেননি! সি পি এমের হুকুম তামিল করতে চাননি, বা, তালিম করতে অপারগ ছিলেন। এটা জরুরি অবস্থার চেয়ে কম!!

শুধু কি তাই? শিক্ষা, স্বস্থ্য, বিদ্যুৎসহ সমস্ত ক্ষেত্রে ‘আমাদের লোক’ আর ক্যাডার ঢুকিয়ে সি পি এম আজ একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছে। আর, পার্টিপোষ্য এই সব লোকেদের অযোগ্যতায় সর্ব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, কারখানা, বাজার, রাইটার্স বিিল্ডস, লালবাজার, থানা, পুলিশচৌকি, বাসট্যািক্সঅটো রিক্সার স্ট্যান্ড–সর্বত্র, সব জায়গাতে আজ সি পি এমের ‘আমাদের লোকে’র দাপটে বাকিদের জীবন অতিষ্ঠ! ‘আমাদের লোক’ যা বলবেন, তা ভালো হোক, মন্দ হোক, আপনাকে মানতে হবে। না মানতে চাইলে আপনাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হবে। পেছনে লাগা হবে। মিথ্যে বদনাম রটানো হবে। এব, তেমন প্রয়োজন হলে আপনার পিঠে ওঁরা দলবদ্ধভাবে ‘বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি’র তকমাও মেরে দিতে পারেন! সি পি এমের ‘আমাদের লোকে’র চোখে আপনি হয়ে যাবেন ‘ওদের লোক’, মানে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভাষায় ‘ওরা’! অপপ্রচারে ওস্তাদ ‘আমাদের লোকে’রা দশবিশজনকে বুঝিয়েও দেবেন ব্যাপারটা। এই দশবিশজনের মধ্যে যঁারা অাবার পেটেখিদেমুখেলাজ গোছের, তঁারা এই সুযোগে সি পি এমের ছিঁটেফেঁাটা প্রসাদ পেতে লেগে পড়বেন আপনার পেছনে! আপনার তখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বঁাচি’ অবস্থা! চাকরিবাকরি ছেড়েছুড়ে পালাতে পারলে বঁাচেন। কিন্তু, তা তো হয় না। সুতরা, সব মেনে মুখ বুঁজে প্রায় হিটলারের কনসেনেট্রশন ক্যােম্পর এক জন বন্দির মতো আপনাকে দিনগত পাপক্ষয় করে যেতে হয়!

এই পরিবেশ কি জরুরি অবস্থার চেয়ে কম ভয়কর? কম অমানবিক? আজ সারা বালায় ‘পরিবর্তনে’র যে হাওয়া উঠেছে, সে তো এক দিনে হঠাৎ ওঠেনি। বছরের পর বছর তিল তিল করে জমেওঠা আপনাদের মতো অসখ্য মানুষের এই অসহনীয় জীবনের ক্ষোভ, হতাশা, অভিমান, বিদ্বেষ আজ এই হাওয়া তুলেছে। কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল আর মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কামান দাগলে এই হাওয়া থামবে না। সি পি এম এটা খুব ভালোই বুঝেছে। বুঝেছে বলেই বুদ্ধবাবু, বিমান বসুরা এখন তর্জনগর্জনের পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়ার লাইন নিয়েছেন। ক’ দিন আগেও যেসব কাগজ বা চ্যানেলকে ‘বাজারি’ বলে গাল পেড়েছেন ওঁরা, আজ সেগুলিকেই ব্যবহার করে, ইণ্টারভিউ দিয়ে, মিঠে মিঠে কথা বলে, পরিবর্তনকামী বিমুখ জনতার মন ভেজাতে চাইছেন। মুশকিল হল, জনতার মন তাতে ভিজছেই না, উলটে তঁাদের চোখে দোর্দণ্ডপ্রতাপ সি পি এমের অসহায় অবস্থাটাই প্রকট হয়ে উঠছে। সিনেমার ভিলেন বেকায়দায় পড়লে দর্শক যেমন মজা পায়, ঠিক তেমনই এখন বালার গ্রামশহরের মানুষ হাসছেন, মজা পাচ্ছেন, সি পি এমের এই নাকাল অবস্থা দেখে। একেই হয় তো বলে, কালের বিচার! ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, সে যত বড় বাহাদুরই হোন না কেন।

কেবল সাধারণ মানুষ নন, তঁাদের মধ্যে যঁারা শিক্ষায়, মেধায় শ্রেষ্ঠতর, সি পি এমের সকীর্ণ স্বার্থবাদী রাজনীতি আজ তঁাদেরও ভেঙে দু’টুকরো করে দিয়েছে। আমার তো মনে হয়, এ বারের নির্বাচনের সব চেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল এইটে। আমি যত দূর জানি, এর আগে ভারতের কোনও রাজ্যে কখনও বুদ্ধিজীবী সমাজ এমনভাবে দু’টুকরো হয়ে যায়নি। এই রাজ্যে এ ভাগ কে করলেন? স্বআমাদের সংস্কৃতিবান, বুদ্ধিজীবী মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! ঘটনাটা কী? নন্দীগ্রামে পুলিশি তাণ্ডব এবং গুলি চালিয়ে মানুষ খুনের প্রতিবাদে সারা রাজ্যের সর্ব স্তরের মানুষ (সি পি এমের পেটোয়া বাহিনী ছাড়া) যখন প্রতিবাদে সোচ্চার, তখন বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অশও চুপ করে থাকতে পারেননি। প্রথমে শঙ্খ ঘোষ, মহােশ্বতা দেবী, শুভাপ্রসন্ন প্রমুখের নেতৃেত্ব দলমতনির্বিশেষে বহু লেখক, কবি, শিল্পী প্রতিবাদে শামিল হলেন। দু’ চার দিন পর ঘটনার অঁাচ একটু কমলেই দেখা গেল, বেশ কিছু মুখ ঝরে গিয়েছে। শুধু ঝরে যায়নি, নানান চ্যানেলে বসে উলটো সুর গাইছেন! রাজ্যের মানুষ বুঝলেন, মেকি মায়াকান্না কেবল রাজনৈতিক নেতারাই কঁাদেন না, বুদ্ধিজীবীরাও কঁাদেন! নেতারা কঁাদেন ভোট পেতে, আর, বুদ্ধিজীবীরা কঁাদেন সি পি এমের প্রসাদ পেতে–তফাত এই যা!

কিন্তু, সে দিন নন্দীগ্রামসিঙ্গুরের অসহায়, গরিব মানুষগুলোর জন্য সত্যিই যঁাদের প্রাণ কেঁদেছিল, তঁারা আন্দোলনটা চালিয়ে গেলেন। অনেক চেষ্টা করেও সংস্কৃতিবান মুখ্যমন্ত্রী তঁাদের বশে আনতে পারলেন না। অতএব, বুদ্ধবাবু ঘোষণা করে দিলেন, যঁারা তঁার সঙ্গে আছেন, তঁারা ‘আমরা’, আর, বাকিরা ‘ওরা’! ক্ষমতার অন্তঃসারশূন্য দেম্ভ এই বিভাজনরেখা টেনে বুদ্ধবাবু আখেরে বিরোধীদেরই হাত শক্ত করে দিলেন। এই ‘ওরা’র দলকে সঙ্গে পেয়ে বামবিরোধী সাধারণ মানুষের পরিবর্তনের ভাবনাটা আরও জোরদার হল। একটা নতুন মাত্রা পেল। সি পি এমের চিন্তা বাড়িয়ে ‘ওরা’র দল ‘পরিবর্তন চাই’ লিখে নিজেদের ছবিসহ হোর্ডিটাঙিয়ে দিলেন শহরের সর্বত্র। এব, বিপদ বুঝে সি পি এমের নেতা, উপনেতারা তা নিয়ে হইচই শুরু করলেন, ক্যাডার বাহিনী অতি উৎসাহে হোর্ডিয়ের মুখগুলিতে রয়ের পেঁাচ দিয়ে বিকৃত করে তুলতে শুরু করল। এতে হোর্ডিয়ের মুখগুলির কোনও ক্ষতি হল না, কেবল সি পি এমের মতো এত বড় একটা সংস্কৃতিবান, রুচিসম্পন্ন, বিপ্লবী পার্টির রাজনৈতিক দেউলেপনার হাড়বেরকরা ছবিটা রাজ্যবাসী দেখে ফেললেন!

অবশ্য, এতে বুদ্ধবাবুদের এতটুকু লজ্জা আছে বলে তো মনে হয় না। কারণ, তিনি সে দিন একটা বক্ততায় বললেন, ‘‘এখানে এখন পঁাচছ’টা থিয়েটার চলছে যেগুলো সবই সরকারবিরোধী। আমরা জানি। কিন্তু, আমরা তো তাদের শো বন্ধ করে দিচ্ছি না! দিনের পর দিন শো করে চলেছেন তঁারা।’’

সত্যিই কি তাই? বুদ্ধবাবু কি বলতে পারবেন, কার নির্দেশে ওই থিয়েটারগুলো বিভিন্ন সরকারিবেসরকারি হল ভাড়াই পাচ্ছেন না?

আসলে, কয়েক জন কবি আর সাহিত্যিকের কিছু কথায় তঁাদের বুকে এমন কঁাপন ধরেছে যে, ভয় ঢাকতে রাজাবাবু এবতঁার পারিষদরা এখন যা মুখে আসে, তাই বলছেন। এই রবিবারও সি পি এমের মন্ত্রী সুভাষ চক্রবতর্ী পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ‘আকাট, গণ্ডমূর্খ, কুশিক্ষিতের দল’ বলেছেন। ক্ষমতার দম্ভ কোন পর্যায়ে পেঁৗছলে ওঁর মতো রাজনৈতিক নেতা প্রতিভাবানদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন! আসলে, রাজনীতির পাশাপাশি রাজ্যের সাংস্কৃতিক জগৎটাকেও কুক্ষিগত করতে সি পি এম যে কত নীচে নেমেছে, সেটাই এই সব রুচিহীন মন্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।

সুভাষবাবুরা ভাবছেন, রাজ্যের মানুষ সব তঁার কথায় নাচবেন! তৃণমূল প্রাথর্রী বাপমা তুলে বিমান বসুর কটূক্তিতে উল্লসিত হয়ে বাম ভোট বাক্স ভরিয়ে দেবেন! তা হলে বলছি, আপনারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন এখনও। মেশিনে কারচুপি করে, রিগি করে, যত আসনই পান, সত্তরের দশকে পাওয়া মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আস্থা–কিছুই আর কোনও দিন আপনারা পাবেন না। সীমাহীন ঔদ্ধত্য আপনাদের ভাবমূর্তিকে আজ এমন করে তুলেছে যে, তা দেখে সাধারণ মানুষ ভয় পেতে পারে, ঘৃণা করতে পারে; কিন্তু, ভালোবাসতে পারবে না।

ভুলে যাবেন না, তঁাবেদার, গোলাম, জোহুজুরে যে লোকগুলোকে দেখে আজও আপনারা বুকে বল পাচ্ছেন, সাগঠনিক শক্তি বলে ভাবছেন, দিন বদলালে তঁাদের খুব বেশিকে পাশে পাবেন না। এঁরা কখনও নিঃস্বার্থ সেবা দিতে পার্টি ধরেন না। ধরেন ধান্দাবাজির জন্য। ধান্দাবাজির সুযোগ অন্য দিকে বেশি হলেই এঁরা কেটে যাবেন। সিদ্ধার্থ রায়ের একদা সঙ্গীর কত জন লাল ঝান্ডা ধরে রাতারাতি আপনাদের দলে সেঁধিয়েছিল, এব, পরে নেতা, উপনেতা বনেছেন, আপনি জানেন না?

তাই বলছি, সময় থাকতে সতর্ক হোন। না হলে এক দিন ইতিহাসের অঁাস্তাকুড় ছাড়া আপনারা পা রাখার জায়গা পাবেন না। আবার বলি, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ‘পরিবর্তন চাই’ তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে কিন্তু

সাবধান!

পরিবর্তন চাই

এ বারের নির্বাচনে ‘পরিবর্তনে’র একটা জোরদার হাওয়া যে উঠেছে, তাতে সন্দেহ নেই। রাজ্যের সর্ব স্তরের মানুষ ‘পরিবর্তন’ চাইছেন। পরিবর্তনের পর কী হবে, কে আসবে, ভালো হবে, না মন্দ–এ সব এ রাজ্যের মানুষের মাথাতেই নেই। যে কোনও মূল্যে তঁারা চাইছেন, সি পি এমের দম্ভী, মানবতাবোধহীন, উদ্ধত সরকারের পতন। বছরের পর বছর, দিনের পর দিন একটানা অত্যাচার, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা সহ্য করতে করতে রাজ্যের বামবিরোধী মানুষ আজ মরিয়া।

সি পি এমসন্ত্রাসের বদ্ধ কারায় গুমরে মরতে মরতে গ্রামের গরিব সাধারণ মানুষও আজ ক্ষিপ্ত, বীতশ্রদ্ধ এই বাম সরকারের উপর। সকলেই এই হুমকি হামলাসন্ত্রাসের পরিবেশ থেকে মুক্তি চাইছেন। এই মুক্তিপথের নামই তঁারা দিয়েছেন–‘পরিবর্তন’।

আজ স্মৃতি হাতড়ে দেখছি, যেন এমনটাই হয়েছিল সাতাত্তর সালে। এমনি একটা ‘পরিবর্তনে’র হাওয়া উঠেছিল সে বারও। সত্তরের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা, দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে কারণেঅকারণে জেলবন্দি করা, আর এই রাজ্যে সিদ্ধার্থ রায়ের ৈস্বরাচারী শাসন, তঁার দলের গুণ্ডাবাহিনীর সন্ত্রাস, খুনোখুনি, বরুণ সেনগুপ্ত, গৌরকিশোর ঘোষের মতো বিখ্যাত সাবাদিকদের জেলে ঢোকানো ইত্যাদি ঘটনায় রাজ্যজুড়ে এক অসহনীয় পরিবেশের সৃিষ্ট হয়েছিল। রাজ্যের সাধারণ মানুষ অসহায় আতঙ্কে দিশেহারা। সবাই ভাবছিলেন, কবে এই কালরাত্রি শেষ হবে! সে দিন কিন্তু এই সি পি এমের তখনকার নেতা এবকমর্রীাই সাধারণ মানুষের পাশে দঁাড়িয়ে তঁাদের সাহস জুগিয়েছিলেন, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।

মানুষ সে দিন মার্কসবাদী নেতা ও কমর্ীদের সৎ, সহনশীল, আদর্শবাদী ভূমিকা দেখে তঁাদের বিশ্বাস করেছিলেন, আস্থা রেখেছিলেন তঁাদের ওপর। সেই আস্থা ও বিশ্বাসে ভর করেই সাতাত্তরের নির্বাচনে এ রাজ্যের মানুষ নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিলেন ভোট বােক্স। পরিবর্তনের ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল সে দিনের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিদ্ধার্থ রায় এব তঁার বাহিনী। পুলিশ দিয়ে, হুমকি আর সন্ত্রাস চালিয়ে, মানুষকে যে বেশি দিন শাসনে রাখা যায় না–সিদ্ধার্থ রায়ের ইতিহাস সেটা প্রমাণ করেছিল।

কিন্তু, আজকের মার্কসবাদীরা তা থেকে কোনও শিক্ষাই নেননি। বর, বিগত কয়েক বছরের ঘটনাবলী দেখে মনে হচ্ছে–তঁারা ওই ইতিহাসকে ভুল প্রমাণ করতেই বেশি আগ্রহী। না হলে, সর্ব ক্ষেত্রে কেবল বাহুবল প্রয়োগ করে, হুমকিধমকি দিয়ে ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার এমন নির্মম খেলায় কেউ মাতে? সাধারণ মানুষের সামান্য জমিবাড়ির অধিকার হরণ করতে এমন আগ্রাসী ভূমিকা নেয়? জনতার মহাশক্তিকে কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অপমান করে? গ্রামের একটি অতি সাধারণ মেয়ের মর্মািন্তক মৃত্যুর কাহিনি চূড়ান্ত বিকৃত করে সিডি বানায়, আর, সকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে তা ব্যবহার করে? এই জন্যই তো যে মার্কসবাদীরা সাতাত্তরে সাধারণ মানুষের কাছে ‘পরিত্রাতা’ ছিলেন, আজ তঁাদের হাত থেকেই পরিত্রাণ পেতে মানুষ ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিয়েছেন!

দেবেন নাই বা কেন?

গত তিন দশকের বেশি একচ্ছত্র শাসন ক্ষমতায় থেকে সি পি এম তো সিদ্ধার্থ রায়দের চেয়ে কম কিছু করেনি! ওঁদের জমানায় রাজ্যজুড়ে হয় তো জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। কিন্তু, আমরা কি বলতে পারি, এ রাজ্যের গ্রামমফস্‌সলের মানুষ তার চেয়ে খুব ভালো অবস্থায় আছেন? গত তিন দশকে সি পি এমের নেতা আর হার্মাদ ক্যাডার বাহিনীর ফতোয়া না মানায় গ্রাম, মফস্‌সলের কত সাধারণ গরিব মানুষ একঘরে হয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, খুন হয়েছেন, তঁাদের ন্যায্য সম্পত্তি, জমিজমা থেকে বিঞ্চত হয়েছেন, তছনছ হয়ে গিয়েছে কত সসার–তার হিসাব আছে? শুধু গ্রামে কেন, শহরেও খুঁজলে এমন ভূরি ভূরি নজির মিলবে।

কেন এই শািস্ত? কারণ, এঁরা সি পি এমের কথা শোনেননি! সি পি এমের হুকুম তামিল করতে চাননি, বা, তালিম করতে অপারগ ছিলেন। এটা জরুরি অবস্থার চেয়ে কম!!

শুধু কি তাই? শিক্ষা, স্বস্থ্য, বিদ্যুৎসহ সমস্ত ক্ষেত্রে ‘আমাদের লোক’ আর ক্যাডার ঢুকিয়ে সি পি এম আজ একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছে। আর, পার্টিপোষ্য এই সব লোকেদের অযোগ্যতায় সর্ব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, কারখানা, বাজার, রাইটার্স বিিল্ডস, লালবাজার, থানা, পুলিশচৌকি, বাসট্যািক্সঅটো রিক্সার স্ট্যান্ড–সর্বত্র, সব জায়গাতে আজ সি পি এমের ‘আমাদের লোকে’র দাপটে বাকিদের জীবন অতিষ্ঠ! ‘আমাদের লোক’ যা বলবেন, তা ভালো হোক, মন্দ হোক, আপনাকে মানতে হবে। না মানতে চাইলে আপনাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হবে। পেছনে লাগা হবে। মিথ্যে বদনাম রটানো হবে। এব, তেমন প্রয়োজন হলে আপনার পিঠে ওঁরা দলবদ্ধভাবে ‘বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি’র তকমাও মেরে দিতে পারেন! সি পি এমের ‘আমাদের লোকে’র চোখে আপনি হয়ে যাবেন ‘ওদের লোক’, মানে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভাষায় ‘ওরা’! অপপ্রচারে ওস্তাদ ‘আমাদের লোকে’রা দশবিশজনকে বুঝিয়েও দেবেন ব্যাপারটা। এই দশবিশজনের মধ্যে যঁারা অাবার পেটেখিদেমুখেলাজ গোছের, তঁারা এই সুযোগে সি পি এমের ছিঁটেফেঁাটা প্রসাদ পেতে লেগে পড়বেন আপনার পেছনে! আপনার তখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বঁাচি’ অবস্থা! চাকরিবাকরি ছেড়েছুড়ে পালাতে পারলে বঁাচেন। কিন্তু, তা তো হয় না। সুতরা, সব মেনে মুখ বুঁজে প্রায় হিটলারের কনসেনেট্রশন ক্যােম্পর এক জন বন্দির মতো আপনাকে দিনগত পাপক্ষয় করে যেতে হয়!

এই পরিবেশ কি জরুরি অবস্থার চেয়ে কম ভয়কর? কম অমানবিক? আজ সারা বালায় ‘পরিবর্তনে’র যে হাওয়া উঠেছে, সে তো এক দিনে হঠাৎ ওঠেনি। বছরের পর বছর তিল তিল করে জমেওঠা আপনাদের মতো অসখ্য মানুষের এই অসহনীয় জীবনের ক্ষোভ, হতাশা, অভিমান, বিদ্বেষ আজ এই হাওয়া তুলেছে। কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল আর মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কামান দাগলে এই হাওয়া থামবে না। সি পি এম এটা খুব ভালোই বুঝেছে। বুঝেছে বলেই বুদ্ধবাবু, বিমান বসুরা এখন তর্জনগর্জনের পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়ার লাইন নিয়েছেন। ক’ দিন আগেও যেসব কাগজ বা চ্যানেলকে ‘বাজারি’ বলে গাল পেড়েছেন ওঁরা, আজ সেগুলিকেই ব্যবহার করে, ইণ্টারভিউ দিয়ে, মিঠে মিঠে কথা বলে, পরিবর্তনকামী বিমুখ জনতার মন ভেজাতে চাইছেন। মুশকিল হল, জনতার মন তাতে ভিজছেই না, উলটে তঁাদের চোখে দোর্দণ্ডপ্রতাপ সি পি এমের অসহায় অবস্থাটাই প্রকট হয়ে উঠছে। সিনেমার ভিলেন বেকায়দায় পড়লে দর্শক যেমন মজা পায়, ঠিক তেমনই এখন বালার গ্রামশহরের মানুষ হাসছেন, মজা পাচ্ছেন, সি পি এমের এই নাকাল অবস্থা দেখে। একেই হয় তো বলে, কালের বিচার! ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, সে যত বড় বাহাদুরই হোন না কেন।

কেবল সাধারণ মানুষ নন, তঁাদের মধ্যে যঁারা শিক্ষায়, মেধায় শ্রেষ্ঠতর, সি পি এমের সকীর্ণ স্বার্থবাদী রাজনীতি আজ তঁাদেরও ভেঙে দু’টুকরো করে দিয়েছে। আমার তো মনে হয়, এ বারের নির্বাচনের সব চেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল এইটে। আমি যত দূর জানি, এর আগে ভারতের কোনও রাজ্যে কখনও বুদ্ধিজীবী সমাজ এমনভাবে দু’টুকরো হয়ে যায়নি। এই রাজ্যে এ ভাগ কে করলেন? স্বআমাদের সংস্কৃতিবান, বুদ্ধিজীবী মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! ঘটনাটা কী? নন্দীগ্রামে পুলিশি তাণ্ডব এবং গুলি চালিয়ে মানুষ খুনের প্রতিবাদে সারা রাজ্যের সর্ব স্তরের মানুষ (সি পি এমের পেটোয়া বাহিনী ছাড়া) যখন প্রতিবাদে সোচ্চার, তখন বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অশও চুপ করে থাকতে পারেননি। প্রথমে শঙ্খ ঘোষ, মহােশ্বতা দেবী, শুভাপ্রসন্ন প্রমুখের নেতৃেত্ব দলমতনির্বিশেষে বহু লেখক, কবি, শিল্পী প্রতিবাদে শামিল হলেন। দু’ চার দিন পর ঘটনার অঁাচ একটু কমলেই দেখা গেল, বেশ কিছু মুখ ঝরে গিয়েছে। শুধু ঝরে যায়নি, নানান চ্যানেলে বসে উলটো সুর গাইছেন! রাজ্যের মানুষ বুঝলেন, মেকি মায়াকান্না কেবল রাজনৈতিক নেতারাই কঁাদেন না, বুদ্ধিজীবীরাও কঁাদেন! নেতারা কঁাদেন ভোট পেতে, আর, বুদ্ধিজীবীরা কঁাদেন সি পি এমের প্রসাদ পেতে–তফাত এই যা!

কিন্তু, সে দিন নন্দীগ্রামসিঙ্গুরের অসহায়, গরিব মানুষগুলোর জন্য সত্যিই যঁাদের প্রাণ কেঁদেছিল, তঁারা আন্দোলনটা চালিয়ে গেলেন। অনেক চেষ্টা করেও সংস্কৃতিবান মুখ্যমন্ত্রী তঁাদের বশে আনতে পারলেন না। অতএব, বুদ্ধবাবু ঘোষণা করে দিলেন, যঁারা তঁার সঙ্গে আছেন, তঁারা ‘আমরা’, আর, বাকিরা ‘ওরা’! ক্ষমতার অন্তঃসারশূন্য দেম্ভ এই বিভাজনরেখা টেনে বুদ্ধবাবু আখেরে বিরোধীদেরই হাত শক্ত করে দিলেন। এই ‘ওরা’র দলকে সঙ্গে পেয়ে বামবিরোধী সাধারণ মানুষের পরিবর্তনের ভাবনাটা আরও জোরদার হল। একটা নতুন মাত্রা পেল। সি পি এমের চিন্তা বাড়িয়ে ‘ওরা’র দল ‘পরিবর্তন চাই’ লিখে নিজেদের ছবিসহ হোর্ডিটাঙিয়ে দিলেন শহরের সর্বত্র। এব, বিপদ বুঝে সি পি এমের নেতা, উপনেতারা তা নিয়ে হইচই শুরু করলেন, ক্যাডার বাহিনী অতি উৎসাহে হোর্ডিয়ের মুখগুলিতে রয়ের পেঁাচ দিয়ে বিকৃত করে তুলতে শুরু করল। এতে হোর্ডিয়ের মুখগুলির কোনও ক্ষতি হল না, কেবল সি পি এমের মতো এত বড় একটা সংস্কৃতিবান, রুচিসম্পন্ন, বিপ্লবী পার্টির রাজনৈতিক দেউলেপনার হাড়বেরকরা ছবিটা রাজ্যবাসী দেখে ফেললেন!

অবশ্য, এতে বুদ্ধবাবুদের এতটুকু লজ্জা আছে বলে তো মনে হয় না। কারণ, তিনি সে দিন একটা বক্ততায় বললেন, ‘‘এখানে এখন পঁাচছ’টা থিয়েটার চলছে যেগুলো সবই সরকারবিরোধী। আমরা জানি। কিন্তু, আমরা তো তাদের শো বন্ধ করে দিচ্ছি না! দিনের পর দিন শো করে চলেছেন তঁারা।’’

সত্যিই কি তাই? বুদ্ধবাবু কি বলতে পারবেন, কার নির্দেশে ওই থিয়েটারগুলো বিভিন্ন সরকারিবেসরকারি হল ভাড়াই পাচ্ছেন না?

আসলে, কয়েক জন কবি আর সাহিত্যিকের কিছু কথায় তঁাদের বুকে এমন কঁাপন ধরেছে যে, ভয় ঢাকতে রাজাবাবু এবতঁার পারিষদরা এখন যা মুখে আসে, তাই বলছেন। এই রবিবারও সি পি এমের মন্ত্রী সুভাষ চক্রবতর্ী পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ‘আকাট, গণ্ডমূর্খ, কুশিক্ষিতের দল’ বলেছেন। ক্ষমতার দম্ভ কোন পর্যায়ে পেঁৗছলে ওঁর মতো রাজনৈতিক নেতা প্রতিভাবানদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন! আসলে, রাজনীতির পাশাপাশি রাজ্যের সাংস্কৃতিক জগৎটাকেও কুক্ষিগত করতে সি পি এম যে কত নীচে নেমেছে, সেটাই এই সব রুচিহীন মন্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।

সুভাষবাবুরা ভাবছেন, রাজ্যের মানুষ সব তঁার কথায় নাচবেন! তৃণমূল প্রাথর্রী বাপমা তুলে বিমান বসুর কটূক্তিতে উল্লসিত হয়ে বাম ভোট বাক্স ভরিয়ে দেবেন! তা হলে বলছি, আপনারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন এখনও। মেশিনে কারচুপি করে, রিগি করে, যত আসনই পান, সত্তরের দশকে পাওয়া মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আস্থা–কিছুই আর কোনও দিন আপনারা পাবেন না। সীমাহীন ঔদ্ধত্য আপনাদের ভাবমূর্তিকে আজ এমন করে তুলেছে যে, তা দেখে সাধারণ মানুষ ভয় পেতে পারে, ঘৃণা করতে পারে; কিন্তু, ভালোবাসতে পারবে না।

ভুলে যাবেন না, তঁাবেদার, গোলাম, জোহুজুরে যে লোকগুলোকে দেখে আজও আপনারা বুকে বল পাচ্ছেন, সাগঠনিক শক্তি বলে ভাবছেন, দিন বদলালে তঁাদের খুব বেশিকে পাশে পাবেন না। এঁরা কখনও নিঃস্বার্থ সেবা দিতে পার্টি ধরেন না। ধরেন ধান্দাবাজির জন্য। ধান্দাবাজির সুযোগ অন্য দিকে বেশি হলেই এঁরা কেটে যাবেন। সিদ্ধার্থ রায়ের একদা সঙ্গীর কত জন লাল ঝান্ডা ধরে রাতারাতি আপনাদের দলে সেঁধিয়েছিল, এব, পরে নেতা, উপনেতা বনেছেন, আপনি জানেন না?

তাই বলছি, সময় থাকতে সতর্ক হোন। না হলে এক দিন ইতিহাসের অঁাস্তাকুড় ছাড়া আপনারা পা রাখার জায়গা পাবেন না। আবার বলি, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ‘পরিবর্তন চাই’ তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে কিন্তু

সাবধান!